সিলেটটুডে ডেস্ক | ০২ অক্টোবর, ২০২৫
জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ‘জাতীয় নার্স কমিশন’ গঠনের দাবি জানানোর পাশাপাশি নার্সদের পেশাকে চিকিৎসকদের সমমর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেছেন, “যদি আমরা সত্যিকার অর্থে স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চাই, অবিলম্বে সরকারকে একটা ‘জাতীয় নার্স কমিশন’ গঠন করতে হবে, এটা আমাদের দাবি। এ কমিশনকে সমমর্যাদা সম্পন্ন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক শক্তি হিসেবে গঠন করতে হবে। ‘তালি-বালি’ করা যাবে না।
“কমিশন করবেন এবং নার্সিং পেশাকে মর্যাদা দেবেন ডাক্তারদের মত। যদি নার্সিং পেশাকে ডাক্তারের সমমর্যাদা সম্পন্ন না করেন, আমরা জীবনেও জনগণের স্বাস্থ্য কায়েম করতে পারব না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘স্বাস্থ্য আন্দোলন’ এর যৌথ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তিনি।
স্বাস্থ্য আন্দোলনের প্রধান ফরহাদ মজহার বলেন, “নার্সিং পেশা অত্যন্ত মহৎ পেশা, এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ডাক্তারদের সমমর্যাদা সম্পন্ন পেশা। একই মর্যাদার পেশা। নার্সরা ডাক্তারদের অধীন কোনো পেশা না, সমমর্যাদার। সেবা নাই তো চিকিৎসা নাই, সেবা নাই তো ডাক্তারি বলে কিছু হবে না। তাহলে সেবা ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব না।”
তিনি বলেন, “আমরা দুই দিনের একটা কর্মশালা করেছি। এটা থেকে শের মানুষকে বোঝাতে চাই, সেবা ছাড়া ও একই সঙ্গে নার্স পেশার যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান আদায় যদি করতে না পারি, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্রমশ আরো খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাবে। ইতোমধ্যে খারাপের দিকে গেছে। সেই কারণে নার্সদের আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের ‘স্বাস্থ্য আন্দোলন’ যুক্ত করেছি। এই আন্দোলন থামবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা জনগণের পক্ষে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে না পারি।”
‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নীতি কার্যকরে সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সরকার বলেছিল, সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্যকর করবে, কবে? সরকারকে আমরা এখন দাবি জানাতে চাই, কেন সেটা করেন নাই। মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের অবশ্যই এটা তদন্ত করতে হবে। এটা তার দায়িত্ব যে, এর আগের সরকারগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পালন করা হয়নি কেন? এসব প্রতিশ্রুতির কথা বলে আপনারা কোটি কোটি টাকা বিদেশ থেকে ঋণ এনেছেন, সেই টাকা কোথায় গেল?”
ফরহাদ মজহার বলেন, “সরকার বলেছে, সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করবেন। ডব্লিউএইচও বলেছে, বিভিন্ন রকমের সরকারের নীতির মধ্যে বলা হয়েছে, সবার জন্য স্বাস্থ্য, সবার জন্য স্বাস্থ্য, সবার জন্য স্বাস্থ্য। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম, সবার জন্য স্বাস্থ্য পালিয়ে গেছে। ওকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।
“এসব তামাশা করার দিন শেষ হয়ে গেছে। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারলেন না কেনো? এর আগে যে সরকার ছিলে আওয়ামী লীগের সরকার, বিএনপির সরকার ছিল, জাতীয় পার্টির সরকার ছিল, এই সকল দুর্বৃত্তদের জিজ্ঞাসা করতে হবে যে কেন তোমরা এটা কায়েম করতে পারলে না। এটা তো তোমার রাষ্ট্রনীতি ছিল, এটা তো ডাব্লিউএইচও ডিক্লারেশন ছিল, এটা তো ‘আলমার্টের’ ডিক্লারেশন ছিল, পারলা না কেন? যদি পারতে তাহলে আজকে নার্সিং পেশা নিয়ে, তাদের পেশার অধিকার নিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হত না।”
তিনি বলেন, “আমরা এখানে এসেছি কেন? কারণ আমরা বুঝতে পেরেছি যে, নার্সদের সম্মান, তাদের পেশাগত মর্যাদা, তাদের অধিকার, এটা যদি আমরা আদায় করতে না পারি, তাহলে সাধারণ জনগণের পক্ষে আমরা সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারব না।”
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘‘অসুখ হলেই এটাকে ডাক্তারি ব্যাপারে পরিণত করা এবং সেই ডাক্তারিকরণে পরিণত করাইয়া কোম্পানির ঔষধ লেখা, প্রেসক্রিপশন দেওয়া আর কোম্পানি-করপোরেশনগুলোর ঔষধ বেচার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এই যে বাজারি ব্যবস্থাকে আমরা স্বাস্থ্যব্যবস্থা বলছি, এখান থেকে আমাদের নিষ্কৃতি দরকার।
“এই ডাক্তারিকরণকে স্বাস্থ্যসেবা বলে না। স্বাস্থ্য মানে কী? এটা প্রতিরোধও বটে। আমার কোনো অসুখ হবে না, এটাকে (অসুখকে) প্রতিরোধ করাও স্বাস্থ্য। ফলে স্বাস্থ্য মানে ডাক্তার, স্বাস্থ্য মানে প্রেসক্রিপশন, স্বাস্থ্য মানে ঔষধ- এসব ভুল চিন্তা আমি বিনয়ের সঙ্গে গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে বলব। এই ভুল চিন্তা থেকে আমাদের সহায়তা করুন, যাতে এখান থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি। নইলে আমরা দেখব যে, ওই ১০টা দোকানের মধ্যে খাদ্য পাওয়া যায় একটায়, আর নয়টা হলো ঔষধ বেঁচে, এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না।”
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফুল ইসলামও বক্তব্য দেন।