সিলেটটুডে ডেস্ক | ১০ নভেম্বর, ২০২৫
নিজের বাবার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ হচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় আমার বাবা মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন ভারতে।’
সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। তবে কী মিথ্যাচার হচ্ছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি। তবে পোস্টের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যেতে পারে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বাবাকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে চলা প্রচারণাকে ইঙ্গিত করে থাকতে পারেন তিনি।
মির্জা ফখরুল লিখেছেন, ‘আমার বাবা সম্বন্ধে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে (শাসনামল)। দুঃখজনকভাবে গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের জুলাইয়ের আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছে।’
দু’দিন ধরে জন্মস্থান ঠাকুরগাঁওয়ে থাকা মির্জা ফখরুল ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘কিছু কথা বলা খুব জরুরি, আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ, তরুণ প্রজন্মের জন্য। এসব কথা বলার কখনো প্রয়োজন মনে করিনি। জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন দেখছি, সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরও জরুরি।’
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই ছোট ভাই আর দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। তারপর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্পে (শরণার্থীশিবির) ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়। আমার বাবা ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে আসেন তখনই। যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে। আমার মরহুম মা তার গয়না বিক্রি করেন। আমি যোগ দেই অর্থনীতির শিক্ষকতায়। প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে। আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়। ১৯৭১-এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন।’
পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার সাবেক মেয়র মির্জা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা ছিল না দাবি করে তার ছেলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক, এর শুরু আমার বাবার হাতে। এই জেলার প্রতিটি সৎ মানুষ জানেন আমার বাবার কথা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে তার স্মৃতি রক্ষার জন্য যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সব নামকরা রাজনীতিবিদ। ১৯৯৭-এ তার মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়।’
শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে নামা মির্জা ফখরুল নিজের রাজনৈতিক সংগ্রাম তুলে ধরে বলেন, ‘গত বছর জুলাইয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছে। আমি আশা করব, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ আমাদের ছেলে-মেয়েরা করবে না। এরা সত্যের পথে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সততা আর পলিসি (নীতি) দিয়ে। শঠতা আর মিথ্যা দিয়ে পপুলিজম কেনা যায়, কিন্তু দেশ গড়া যায় না। আসুন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম আর নতুন প্রজন্মের সাহস ও দেশপ্রেম দিয়ে তৈরি করি একটি মর্যাদাপূর্ণ সৎ মানবিক বাংলাদেশ।’
পবিত্র কোরআনের সুরা আলুহুজুরাতের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে পোস্টটি শেষ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি লেখেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ।’
পোস্টে ‘মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর’ নামের একটি বইয়ের একটি পৃষ্ঠাও যুক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘আমার বাবাও কিন্তু মুসলিম লীগার ছিলেন। তিনি সে সময় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আমার বাবাও মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে চলে গিয়েছিলেন।’