Sylhet Today 24 PRINT

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি : অপরাধী শনাক্ত, ১১ কম্পিউটার জব্দ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৪ মার্চ, ২০১৬

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি যাওয়ার ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ১১টি কম্পিউটার জব্দ করেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। জব্দকৃত কম্পিউটারগুলোর হার্ডডিস্ক ও সংশ্লিষ্ট সার্ভারের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।  জব্দকৃত কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ফরেনসিক পরীক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে ধারণা করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে, অর্থ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। ওই দুজন হলেন,  ডিলিং রুম শাখায় দু’জন যুগ্ম পরিচালক (জেডি) জোবায়ের বিন হুদা ও মিজানুর রহমান। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


এদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। মূলত তদন্ত কার্যক্রমে সমন্বয় আনতেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও প্রযুক্তিগত তথ্য উদ্ঘাটনে অনেক দূর এগিয়েছেন তদন্তকারীরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, যা ঘটেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখাতেই ঘটেছে। এ কারণে ঘটনার জন্য দু’জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করাও সম্ভব হয়েছে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ-কালের মধ্যে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার হেফাজতে নেওয়া হতে পারে।

জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এতদিন প্রভাবশালী যে চক্রটি নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছিল, শনিবার থেকে ওই চক্রটিও পিছু হটতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কথা জানতে পেরে তারা এখন সুর পাল্টিয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজাভের অর্থ চুরি যাওয়ার এক মাস পর বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ দল তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ঘটনার ছায়া তদন্তে নামে।

সূত্র জানায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি, দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের বার্তা বা সংকেত ব্যবহার করে ৩৫টি অর্থ স্থানান্তরের পরামর্শ বা অ্যাডভাইস পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে। পরের দিন ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবারও বাংলাদেশ ব্যাংকে দায়িত্ব পালনের জন্য এসেছিলেন ৮ কর্মকর্তা। কিন্তু ওই দিন তারা কম্পিউটার খুলতে পারেননি। কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত প্রিন্টারগুলোও অকেজো দেখতে পান। অথচ, ওই ৮ কর্মকর্তার কেউই ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে বিষয়টি জানাননি। আর এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়ে চলে যায় শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে। এ কারণে ছুটির দিনেও দায়িত্বে থাকা ওই ৮ কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের অধীন ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখা ঘিরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। একজন যুগ্ম পরিচালকের (জেডি) নেতৃত্বে ৮ কর্মকর্তা এ বিভাগে কাজ করেন। গোয়েন্দাদের কাছে এখন অনেকটাই স্পষ্ট যে, ‘ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখার মাধ্যমেই অর্থ কেলেঙ্কারির এই ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা ১২ জনের একটি তালিকা নিয়ে কাজ শুরু  করেছেন। এরই মধ্যে দু’জনকে অতি সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিলিং রুম শাখায় দু’জন যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা হলেন— জোবায়ের বিন হুদা ও মিজানুর রহমান। এছাড়া, উপপরিচালক (ডিডি) পদে রয়েছেন লাকী সুলতানা, আবদুল্লাহ সালেহ ও প্রভাষ চন্দ্র সিংহ এবং সহকারী পরিচালক (এডি) পদে রয়েছেন আলমগীর হোসেন, রফিক আহমেদ মজুমদার ও সনজিৎ রায়।

সামগ্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি নিরাপত্তার ঘাটতির কারণেই রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম নিজেও এই অদক্ষতার কথা রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা যেমন বিষয়টি সময়মতো জানাননি, তেমনি বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লুকিয়ে রেখেছে সরকারের প্রায় সব পক্ষের কাছ থেকেই। অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়নি, জানতেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাও। ফলে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় মুখোমুখি অবস্থানে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি যেভাবে হ্যান্ডল করেছে, তাতে তিনি খুব আনহ্যাপি । বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী।

এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী রবিবার বিকেলে গণভবনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী আবার সচিবালয়ে ফেরেন। গণভবনে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে সোমবারের নিয়মিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, প্রায় ৮শ কোটি টাকা খোওয়ানোর পর লেনদেনে সতর্ক হয়ে উঠেছে  কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে বর্তমানে লেনদেনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইফট বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি টেলিফোনের মাধ্যমে পুনরায় বিষয়টি নিশ্চিত করছে। এছাড়া, সব ক্ষেত্রেই তারা এমন বার্তা দিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনও লেনদেন কার্যকর করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেয়।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.