Sylhet Today 24 PRINT

ম্যাজিস্ট্রেটের দুঃসাহসিক অভিযানে শাহজালাল বিমানবন্দর দানবাক্স প্রতারণামুক্ত

সাব্বির খান |  ১৬ মার্চ, ২০১৬

একসময় অবসর উপভোগ করতে মানুষ ছুটে আসত এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এখনো ছোটে তবে বিপরীত দিকে, নাকে রুমাল দিয়ে। খোকাকে বিমানবন্দরে ঢুকিয়ে দিয়ে মা উদাস মনে এদিক ওদিক তাকায়, রেলিঙে সাঁটানো অগণিত গোলাকার দানবাক্স তার দিকে বোয়াল মাছের মত হা হয়ে থাকে শিকারির মত। পেছনের অনেক জোড়া মেকি চোখের করুণ চাহনি বলে দেয়, গোল-বাবার পেট-সান্ত্বনায় নিরাময় হবে যন্ত্রণা।

ট্যাক্সি ভাড়াটা রেখে বাকি সব তুলে দেয় বাক্স-বাবার উদরে। মনে মনে বিড়বিড় করে মায়ের প্রার্থনা, ‘বাবা সন্তান আমার যাবে তো নিরাপদে?’ যুগ পরে সন্তান ফিরে। অপেক্ষায় মা ক্যানোপিতে। সময় পেরোয়না, যারেই দেখে চোখ বলে ওই তো খোকা বুঝি এলো! কিন্তু কান যে শোনেনা 'মা' ডাকটি! মায়ের আতংক বাড়ে। না জানি খোকার আসা হয়নি!

পাশের এক মা কাঁদছে খোকার লাশ ধরে। দৌড়ে যায় মা বাক্স-বাবার কাছে। বাক্স-বাবা খুশীতে ইয়া বড় হা করে। উজাড় করে সব দিয়ে দেয়। কাকুতি করে, বাবা এনে দাও আমার খোকাকে! এভাবেই ৩০ বছরের অধিককাল ধরে চলে আসছে এই বাক্স বাবার ব্যবসা।

এয়ারপোর্টের ছোট বড় বিভিন্ন পেশার ভদ্রলোক জড়িত এই দানবাক্স ব্যবসায়। দর্শনার্থীর গ্রিল জুড়ে প্রতি ১৫ ফিট পরপর মোট ৫২টি দানবাক্স।

একাধিক সূত্রে জানা যায় যে, প্রতি এক দেড়ঘন্টা পরপর দানবাক্স (বিমানবন্দরে ‘বাক্স’ নামেই পরিচিত) ভর্তি হয় এবং নতুন খালি বাক্স রিপ্লেস করা হয়। প্রতি ১-২ বাক্সের তত্ত্বাবধানে থাকে একজন। দৈনিক আয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা!

গত ১৪ মার্চ "ম্যাজিস্ট্রেট, অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশ" নামক জনপ্রিয় ফেইসবুক পেজের একটি পোস্ট থেকে জানা যায় যে, ম্যাজিস্ট্রেটের উদ্যোগে এপিবিএনের সক্রিয় অংশগ্রহণে মোট ৫২টি অবৈধ অননুমোদিত ও প্রতারক চক্রের বাক্স উচ্ছেদ ও জব্দ করা হয়। সাথে সাথে শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি ও মেরে ফেলার অপরিচিত ফোনকল। ভয়ংকর এসব হুমকি উপেক্ষা করে এ অভিযানের দুঃসাহসিক নেতৃত্ব দেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ।

মুঠোফোনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, ‘দেশের ড্রইং রুম ও প্রধান গেটওয়ে হিসেবে খ্যাত বিমানবন্দরে যে কোন ধরণের অনিয়ম কঠোর আইনে পিষ্ট করা হবে। পাশাপাশি যারা এ বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্বে আছেন, অনিয়ম হলে আগে তাদের বিচার করা হবে। কারণ তাদের যোগসাজশ ছাড়া এসব অপরাধ সম্ভব নয়’।

তিনি আরও বলেন, “এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মানে হাঁটা ম্যাজিস্ট্রেট, বসা ম্যাজিস্ট্রেট নয়। আর বিমান বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট শুধু হাঁটা ম্যাজিস্ট্রেটই না, দৌড়ানো ম্যাজিস্ট্রেট। যাদের ধারণা ম্যাজিস্ট্রেট বসে থাকবে, হাঁটার দরকার কী, তাদের অসৎ উদ্দেশ্যও আমাদের বুঝতে বাকী নেই। আইন সবার জন্য সমান। আমি অন্যায় করলে কখনো ক্ষমা চাইতে যাবো না। আর কোন অপরাধীকেও দেশের আইন ক্ষমা করবেনা”।

পদ-পদবী, চেয়ার, র‍্যাংক নামক কোন শব্দ আইনে নেই। যেদিন এসব শব্দভীতি আমাকে প্রভাবিত করবে, আমি বুঝবো আমি দায়িত্ব পালনে অক্ষম। রিজাইন লেটার রেডি, শুধু সই টা বাকি, বলে তিনি যোগ করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.