ডেস্ক রিপোর্ট | ০৫ মার্চ, ২০১৫
বুয়েটের সাবেক শিক্ষক, মুক্তচিন্তা আন্দোলনের পথিকৃৎ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও গবেষক ড. অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উগ্র জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী কমপক্ষে ১২ ফেসবুকারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। এই ফেসবুক ব্যবহারিদের গোয়েন্দারা অবশ্য ব্লগার নামে অভিহিত করছেন।
রিমাণ্ডে থাকা সন্দেহভাজন জঙ্গি ফারাবী শাফিউর রহমানের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে এরইমধ্যে তাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উগ্রপন্থী ফারাবী শাফিউর রহমান সরাসরি নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে তার সমর্থন ছিল বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন। ধর্ম ও ইসলাম নিয়ে উস্কানিমূলক লেখার কারণে ফারাবী ও তার সহযোগীরা অভিজিৎ রায়কে হুমকি দিয়ে আসছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা জানান, ফারাবী শাফিউর রহমান হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। ফেসবুকের লেখাগুলো সামনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কারণে অনেক কিছুই অস্বীকার করতে পারছেন না। তবে এর বাইরে অনেক প্রশ্নের উত্তরই ফারাবী কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী অনেক প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী দাবি করছেন, ব্লগার হিসেবে অভিজিৎ তার পূর্ব পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতেন। অভিজিৎ তার ব্যক্তিগত শত্রু ছিলেন না। কিন্তু তিনি ধর্মবিরোধী লেখালেখি করতেন এবং তা প্রচার করার কারণে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, তার প্রকাশিত বইগুলো বন্ধের জন্য সক্রিয় ছিলেন। হত্যাকাণ্ডে তিনি জড়িত না থাকলেও সমর্থন ছিল তার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ফারাবী বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে অভিজিৎ রায়কে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। হত্যার জন্য উস্কানিও ছিল তার। তিনি নিজে তার ফেসবুক বন্ধু ও অনুসারীদের মধ্যে অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী বন্যার ছবি ও আমেরিকার ঠিকনাও সরবরাহ করেন। এসব কারণে তাকে হত্যাকাণ্ডে মূল সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত বলেন, ফারাবী এখনও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত তা-ও জানেন না বলে দাবি করছেন তিনি। তবে তাকে নানা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানান তিনি।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি’র ইন্সপেক্টর ফজলুর রহমান জানান, ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও ধর্মীয় উগ্রপন্থী ব্লগার ও সংগঠনগুলোর দিকে নজরদারি করা হচ্ছে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে তাদের কার্যক্রমও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বুধবার পর্যন্ত ফারাবী ছাড়া অভিজিৎ হত্যা মামলায় নতুন কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার সময় বই মেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে মৌলবাদী জঙ্গিরা অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। একই সময় দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত হন অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে মঙ্গলবার আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।