Sylhet Today 24 PRINT

খুন করে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো জঙ্গিরা, বাধা হয়ে দাঁড়ান এক এসআই

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৫ জুলাই, ২০১৬

আগের গুপ্ত হত্যাগুলোর মতো গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলাকারী জঙ্গিরাও খুন করে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো। জিম্মি করা তাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। তবে পুলিশের এক উপ পরিদর্শকের (এসআই) বাধায় নিজেরা বাঁচতে অন্যদেরও জিম্মি করে হামলাকারীরা।

সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এমনটি জানিয়েছেন গুলশান থানার এসআই ফারুক আহমদ। তিনিই প্রথম চারজন কনস্টেবল নিয়ে হাজির হন গুলশানের ওই রেস্টুরেন্টে। তাঁর বাধায় পালিয়ে যেতে পারেনি হামলাকারীরা। এসআই ফারুক বর্তমানে আহত অবস্থায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এসআই ফারুক সোমবার রাতে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওইদিন (১ জুলাই) রাতে গুলশান থানার ওসি সিরাজুল আলম আমাকে ফোন করে বলেন, গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। আমাকে তাড়াতাড়ি সেখানে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

আমি তখন ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছনে ছিলাম। রাত ন'টার আগে বা পরে চারজন ফোর্স নিয়ে আমি ৭৯ নম্বর সড়কে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি একটি পাজারো গাড়ি দাঁড় করানো। গাড়ি সামনে একটা ছেলে। এরপর রেস্তোরাঁর সীমানার ভেতরে ঢুকে দেখি আরেকটা গাড়ির পাশে একজন বিদেশি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এসময় পাশেই দাঁড়ানো তাঁর গাড়ির চালক 'বাঁচাও বাঁচাও' বলে চিৎকার করছে।'

ফারুক বলেন, এসময় আমি কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে সাথেসাথেই দেখি ৪/৫ টা ছেলে রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। তাদের কাঁধে ব্যাগ ও হাতে অস্ত্র। বয়স আনুমানিক ২৫-২৬ বছর। তাদের বেরিয়ে আসতে দেখে আমি আমার সাথের কনস্টেবলদের গুলি ছুঁড়তে বলি।

কনস্টেবলরা গুলি ছুঁড়লে ওই ছেলেরা গ্রেনেড চার্জ করে। এতে আমার সাথে থাকা দু'জন কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়। এসময় আমি আমার ড্রাইভারকে আহত কনস্টেবলদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। এবং আলমগীর নামের আরেক কনস্টেবলের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে আমি গুলি ছোঁড়া শুরু করি।

আমরা গুলি ছোঁড়ার পর ওই ৪/৫ ছেলে রেস্তোরাঁর ভেতরে চলে যায় এবং রেস্তোরাঁর মূল দরজা লাগিয়ে দেয়। এসময় তারা রেস্তোরাঁয় দু'তলায় উঠে আমাদের উদ্দেশ্য করে গ্রেনেড চার্জ করতে থাকে। তবে গ্রেনেড আমার শরীরে না লেগে পাশের গেইটে এসে পড়ে।

সাথেসাথেই আমি গুলশান জোনের ডিসি স্যারকে (পুলিশের উপ কমিশনারকে) বিষয়টি জানাই। তিনি ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে হাজির হন। এরপর বনানী ও গুলশান থানা এবং ডিবির পর্যাপ্ত ফোর্স আসে। তখন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এসআই ফারুক বলেন,  জঙ্গিদের মূল টার্গেট ছিল পূর্বের ন্যায় হত্যা ক‌রে পালিয়ে যাওয়া। জিম্মি করার ইচ্ছা তা‌দের ছিল না। বিদেশিদের হত্যা করেই তারা পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো। আমি এক দুই মিনিট পরে গেলে হয়তো তারা পালিয়ে যেতো।

এসআই ফারুক ৭টি স্প্লিন্টা‌রের আঘাতে গুরুতর আহত হ‌য়ে এখনও ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

উল্লেখ্য, ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে শুক্রবার রাতে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এ ঘটনায়  ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানি, ৩ জন বাংলাদেশি এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হন।  এছাড়া ৬ হামলাকারীও নিহত হয় বলে জানায় পুলিশ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.