Sylhet Today 24 PRINT

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ৩২ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১২ জুলাই, ২০১৬

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জঙ্গিবাদি অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩২ বিশিষ্টজন।

সোমবার (১১ জুলাই) বিবৃতিদাতাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, জঙ্গিদের দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে মধ্যযুগীয় তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা ধর্মের নামে সারাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত করেছিল। আজ ৪৫ বছর পর নতুন আন্তর্জাতিক পটভূমিতে তারা পবিত্র ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলায় লিপ্ত হয়েছে। অথচ সকল ধর্ম শান্তি, মানবতা ও সৌহার্দ্যের জয়গান করে এবং কোন ধর্ম এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা অনুমোদন করে না। তাদের লক্ষ্য জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকির বার্তা পৌঁছে দেওয়া। এর মধ্য দিয়ে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে জাতীয় অগ্রগতির পর রুদ্ধ করতে চায়। তাদের দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে মধ্যযুগীয় তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

সব অপশক্তি রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের অগণিত মানুষ ধর্মের অবমাননা ও ধর্মের নামে নিষ্ঠুরতা মেনে নেবে না। তারা শান্তিপূর্ণ নিরাপদ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বদ্ধপরিকর। কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা এই জাতীয় কর্তব্য সম্পন্ন করা সম্ভব নয়- প্রয়োজন একাত্তরের মতো সমাজের শক্তির ঐক্যবদ্ধ উন্মোচন ও সক্রিয়তা। আমরা দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শ্রেণি-পেশার সকল সংগঠন তথা আপামর জনগণের কাছে আহ্বান জানাই, আসুন আমরা সমবেতভাবে এই অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াই। কতিপয় বিপথগামীর কাছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ পরাস্ত হতে পারে না।

জঙ্গি হামলা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেন, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা এবং নানা নামে তাদের চিন্তাধারার অনুসারীরা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ধারাবাহিক অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক হামলায় হত্যাকারীদের অধিকাংশ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ সচ্ছল পরিবারের সন্তান। আমরা মনে করি নতুন প্রজন্মের মননে মমতা ও মানবিকতার বোধ সৃষ্টির জন্য সমাজের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের অর্থ-যোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারীরা তাদের ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যায় দীক্ষিত ও আচ্ছন্ন করেছে, অত্যধিক ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত করে আত্মহননের পথে প্ররোচিত করেছে। আমরা মনে করি, একদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমে দক্ষতা ও এ ধরণের অভিযানে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, অপর দিকে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিশিষ্টজনরা ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের ভূমিকার জন্য সাধুবাদ এবং বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারের জন্য বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ধন্যবাদ জানান।

বিবৃতিদাতারা হলেন- এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, অজয় রায়, উদীচী সভাপতি কামাল লোহানী, ড. অজয় রায়, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিন, ড. অনুপম সেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আলী যাকের, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপতেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, মমতাজ বেগম, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন্নবী, আবুল মোমেন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, হারুনুর রশীদ ও কাজী সালাহউদ্দিন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.