Sylhet Today 24 PRINT

‘মুসলমান হয়ে থাকলে লাইক-কমেন্ট করেন’

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ জুলাই, ২০১৬

‘আমিন না লিখে যাবেন না’, ‘ছুবহানাল্লাহ, আল্লাহর কি কুদরত!’ এমন লেখার সঙ্গে আল্লাহ কিংবা নবী মুহম্মদ (সা.) নাম কিংবা কালেমা খচিত ছবি হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে দেখে থাকবেন। তুলনামূলক এই ছবিগুলোতে ‘লাইক, শেয়ার ও কমেন্টের’ সংখ্যাও বেশি। ছবির নিচে লেখা থাকে ‘আমিন না লিখে যাবেন না’। আবার কোনো কোনো পোস্টে পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মীয় গ্রন্থ রেখে বলা হয়, ‌'আপনি কোনটি সাপোর্ট করেন', 'মুসলমান হয়ে থাকলে লাইক-কমেন্ট করেন' প্রভৃতি।

বিষয়টি সাধারণভাবে দেখলেও খুব কি সাধারণ? ধর্মীয় অনুভূতি মাখিয়ে পোস্ট করা এসব ছবির আড়ালে থাকতে পারে ‘মারাত্মক অপরাধ’। এসব ছবিতে যেমন প্রচার করা হচ্ছে ধর্মীয় ভ্রান্ত ধারণা। তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ছড়াচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বীজ।

আবার কোনো কোনো পোস্টে লেখা থাকে মাছের গায়ে আল্লাহ লেখা, গাছ সিজদা করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। পোস্টের নিচে এও লেখা থাকে শেয়ার করলে নাকি মনোবাসনা পূর্ণ হবে! আর যদি শেয়ার না করা হয়, আমিন না লেখা হয় তাহলে তার ব্যবসায় ক্ষতি হবে, ছেলে মেয়ে মারা যাবে এসব নানা কথাবার্তা! অনেকে অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে আমিন লিখে, লাইক শেয়ারও করে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ছবির মাধ্যমে বিভিন্ন গোপন বার্তাও সরবরাহ করছে জঙ্গিরা। সিসিএ ফাউন্ডেশনের সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট মেহেদী হাসান বলেন, ‘এসব ছবিতে একটি বিশেষ সফটওয়ার ব্যবহার করে অপরাধীরা লিখে দিচ্ছে তাদের অপরাধ সংক্রান্ত বার্তা। যে লেখা শুধু ওই সফটওয়ার ব্যবহারকারীরাই পড়তে পারবে। অন্য কেউ বুঝতেই পারবেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘জঙ্গিরা মোবাইলে, ফেসবুক মেসেঞ্জারে বা অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ করলে গোয়েন্দাদের নজরদারিতে পড়তে পারে। নজরদারি এড়াতিই এই বিশেষ প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। ছবিতে লাইক শেয়ারের মাধ্যমে তাদের সকল গ্রুপের কাছে এক সময় পৌঁছে যায় বার্তাটি। এতে কেউ সন্দেহের তালিকাতে পড়েন না।’

এসব ছবি প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি। কিন্তু ধর্মীয়ভাবেও এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। না জেনেই অনেকেই প্রচার করছেন ‘জঙ্গি তথ্য’। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এ ধরনের পোস্ট আসলে কিভাবে দেখা যায়, জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘ফেসবুকে যেসব অলৌকিক বিষয়ে পোস্ট থাকে এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। অনেক সময় দেখা যায় মক্কা শরীফের খাদেম স্বপ্নে এটা দেখেছেন, ওটা দেখেছেন -এগুলো ফাজলামো ছাড়া কিছু না। কেউ যদি স্বপ্নে কিছু দেখে থাকে তাহলে বিষয়টি কাউকে না বলে নিজের ভেতরেই রাখতেন।’

এসব প্রচারের মাধ্যমে বরং ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সকলের উচিৎ মানুষকে বিভ্রান্ত করার মতো এই তথ্যগুলো এড়িয়ে চলা। ইসলামেও মন্দকে প্রতিহতের কথা বলা হয়েছে। ইদানিং বিভিন্ন ভূঁইফোড় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম এসেছে। সেগুলোর খবরের বিশ্বাস যোগ্যতাও নিরূপণ করা উচিৎ। কেননা গুজব আর খবর এক নয়।’

এসব থেকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অপরিচিত লোকের কোনো ছবি বা পোস্টে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার দেয়ার সময় সতর্ক হতে হবে। তাছাড়া অপরিচিত কারো ফেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার আগেও ভাবতে হবে। কেননা, অপরাধীরা ছদ্দবেশে আইডি পাসওয়ার্ড হ্যাক করে ব্লাকমেইল করতে পারেন। যারা এ ধরনের পোস্ট দিবেন বা কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তাদের ব্যপারে পুলিশকে তথ্য দেয়া প্রয়োজন।
 
সূত্র : বাংলামেইল

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.