Sylhet Today 24 PRINT

ভাড়াটিয়াদের তথ্য গোপন করেছিলেন জঙ্গি ঘাঁটি ‘জাহাজ বাড়ি’র মালিক

আনিসুর রহমান, কল্যাণপুর থেকে |  ২৬ জুলাই, ২০১৬

বাড়ির নাম জাহাজ বাড়ি নয়, তবু সবাই চেনে এটাকে এ নামে। দেখতে অনেকটা জাহাজের মত বলে লোকমুখে পরিচিত এ বাড়ি জাহাজ বাড়ি হিসেবে। আদতে এ বিল্ডিংয়ের নাম তাজ মঞ্জিল। ঢাকার কল্যাণপুরের ৫ নং সড়কের ৫৩ নং বাড়িটিতেই জঙ্গি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে।

পুলিশ বলছে ওরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গি, আবার পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার পর সেখান থেকে উদ্ধারকৃত আরও অনেক মালামালের মধ্যে রয়েছে কালো পতাকা তাতে সাদা অক্ষরে আরবি হরফ লেখা যা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা ব্যবহার করে থাকে।

গত জুন মাসের ২০ তারিখে বাড়িটির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। এর আগে অনেক দিন এ বাড়িতে পরিবার ছাড়া কাউকে ভাড়া দেওয়া না হলেও গত কয়েক বছর ধরে সেখানে মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়াও শুরু হয়। ব্যাচেলরদের জন্যে বাড়ির ৪র্থ, ৫ম ও ষষ্ঠ তলায় মেস হিসেবে থাকে ভাড়া দেওয়া হয়, এবং গত মাসেই সেখানে উঠে নিহত জঙ্গিরা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ভাড়াটিয়া সম্পর্কে কোন তথ্যও দেন নি বাড়িটির মালিক।
 
এদিকে, ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য না নেওয়া ও পুলিশের কাছে তথ্য গোপন রাখার কারণে রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘জাহাজ বিল্ডিং’-এর মালিকের স্ত্রী মমতাজ পারভীন ও তাঁর ছেলে মাজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আহমদ সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।

ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য না নেওয়া ও পুলিশের কাছে তথ্য গোপন রাখার কারণে ৫৪ ধারায় এই দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ভোর রাতে পুলিশ ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় অভিযান চালায়। অভিযানে ৯ সন্দেহভাজন জঙ্গি মারা যায়। অভিযানের সময় হাসান নামে একজনকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদ প্রবাসী। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান বাড়ির দোতলায় বসবাস করেন। গ্রেপ্তার দুজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ভবনটির যে ফ্ল্যাটে অভিযুক্ত জঙ্গিরা ছিল সেখানকার কিছু ছবি পাওয়া গেছে পুলিশের কাছ থেকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ফ্ল্যাটটির দেয়ালে অনেক বুলেটের চিহ্ন। মেঝেতে ও সিঁড়িতে পড়ে আছে গুলির খোসা। আর পড়ে রয়েছে অভিযুক্ত জঙ্গিদের রক্তাক্ত মৃতদেহ।

এদের পরনে কালো পাঞ্জাবি, গলায় স্কার্ফ প্যাচানো। একজনের হাতে একটি ছুরি। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কম্পিউটারের কিবোর্ড, মোবাইলের পরনে, হেডফোন, অনেকগুলো ব্যাকপ্যাক।

কয়েকটি ব্যাকপ্যাকের উপর একটি কালো পতাকা রাখা, তাতে সাদা অক্ষরে আরবী হরফ লেখা। এই পতাকা ব্যবহার করতে দেখা যায় কথিত আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটকে। প্লাস্টিকের একটি র‍্যাকের উপর রাখা দুটি ড্যাগার, একটি বিদেশী পিস্তল ও একটি চশমার খাপ।

আরেকটি কক্ষে আরো অনেকগুলো ব্যাকপ্যাক, ভাঙ্গা ল্যাপটপ, ল্যাপটপের ব্যাগ। জানালায় একটি কালো পতাকা টানানো, তাতে সাদা অক্ষরে আরবী হরফ লেখা। মেঝেতে পড়ে আছে একটি দা।

পুলিশ পরে এসব কিছুই জব্দ করেছে এবং জব্দকৃত মালামাল হিসেবে প্রদর্শন করেছে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.