Sylhet Today 24 PRINT

‘সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিয়েছে পুলিশ’

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩১ জানুয়ারী, ২০১৭

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ঘরে পুলিশ আগুন দিয়েছে বলে হাইকোর্টের জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি থেকে উচ্ছেদের সময় সাঁওতালদের ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের কিছু সদস্য জড়িত ছিলেন।

প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, “সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানোর ঘটনার জন্য স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি এবং ওই ঘটনার সময়ে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য দায়ী। এই আগুন লাগানোর ঘটনার সাথে দুইজন পুলিশ সদস্য ও একজন ডিবি সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত।”

গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহিদুল্লাহ রোববার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু ৬৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্তসার মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চে উপস্থাপন করেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর এই তদন্তের আদেশ দেয়। উচ্ছেদ অভিযানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কারা জড়িত এবং সেখানে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত কি না- তা তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে।

গত ২৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শহিদুল্লাহ সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া গ্রামে যান এবং সব কিছু ঘুরে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও বাঙালি পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। আগুনে পোড়া ঘরের কিছু আলামতও তারা সংগ্রহ করেন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম ময়নুল হাসান ইউসুফ।

মুখ্য বিচারিক হাকিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেদিন দুইজন পুলিশ সদস্য ও একজন ডিবি সদস্য যখন আগুন দিচ্ছিলেন, আরও কিছু পুলিশ সদস্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন যারা আগুন লাগানোয় সক্রিয় অংশগ্রহণ না করলেও তা নেভানোর চেষ্টা করেননি।

যারা আগুন দিচ্ছিলেন তাদের মাথায় হেলমেট থাকায় এবং অনেক দূর থেকে ঘটনাটি ভিডিও করায় ওই পুলিশ সদস‌্যদের চেহারা শনাক্ত করা যায়নি। এই কমিটি গাইবান্ধার পুলিশ সুপারের কাছে সেদিন দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস‌্যদের নামের তালিকা চাইলেও ওই সময় আরেকটি কমিটির তদন্ত চলায় সেই তালিকা পাওয়া যায়নি বলে মোতাহার হোসেন সাজু জানান।

১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। পরে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে তারা। গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে।

সংর্ঘষের পর গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই কল্যাণ চক্রবর্তী ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় চার সাঁওতালকে গ্রেপ্তার করার পর তারা জামিনে মুক্তি পান। অন্যদিকে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদের ঘটনায় মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মরমুর ছেলে স্বপন মুরমু গত ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন; তার মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দশদিন পর গত ২৬ নভেম্বর সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত টমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০-৬০০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেন। এছাড়া হাই কোর্টে দুটি রিট আবেদন হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.