Sylhet Today 24 PRINT

৩৫ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৬ এপ্রিল, ২০১৭

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এবারের এপ্রিলে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের আবহাওয়াবিদেরা। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪ হাজার ৫৩ মিলিমিটার। সপ্তাহ বাকি থাকতেই রেকর্ড হয়ে গেছে ৮ হাজার ৯০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের  উপপরিচালক আয়েশা খাতুন অধিদপ্তরের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ১৯৮১ সালের এপ্রিলে সারা দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। এর ৬ বছর পর একই মাসে প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল।

তিনি আরো জানান,  ১৯৮১ সালে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৯৮, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলেও তা এবারের চেয়ে কম।

অবশ্য এপ্রিলে কালবৈশাখী ঝড় স্বাভাবিক চিত্র হলেও এবার যতক্ষণ বৃষ্টি হচ্ছে ততক্ষণ মুষলধারে ঝরছে, যা সাধারণত বর্ষাকালেই দেখা যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মার্চে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ২০০৫ সালের মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। এ বছর অতিবৃষ্টি শুরু হয়েছে মার্চ মাস থেকেই।

দেশের বাইরে উজানেও এ বছর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আর অনেক বছর পর এ ধরনের ভারি বর্ষণকে ‘ক্লাইমেট ভ্যারিয়েবিলি’ বলছেন আবহাওয়াবিদরা।

বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয় বেশি দুর্বল থাকায় পুবালি ও পশ্চিমা লঘুচাপের সক্রিয়তাকে অতি বর্ষণের কারণ দেখাচ্ছেন তারা। পৃথিবীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। সেখানে এ বছর মার্চের শেষ ৯ দিনে ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা সেখানকার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। উজানের আরও অনেক স্থানে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ সময় বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তবে পরিমাণটা অস্বাভাবিক। সমগ্র এপ্রিল মাসের স্বাভাবিক গড় বৃষ্টির পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ৫৩ মিলিমিটার। এপ্রিলের ২৫ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮ হাজার ৯০৪ মিলিমিটার। তিনি বলেন, এ বছর পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব অনেক বেশি। সেই কারণে দেশের ভেতরে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। নিয়মিত বিরতিতে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও এই সময়ের স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম আছে।

এপ্রিলের বিভিন্ন দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, ২ এপ্রিল সিলেটে ৭১ মিলিমিটার, ৩ এপ্রিল সিলেটে ৮১ মিলিমিটার, ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে ৫৮ মিলিমিটার, ৫ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে ১২২ মিলিমিটার, ৭ এপ্রিল সিলেটে ৬২ মিলিমিটার, ৮ এপ্রিল নেত্রকোনায় ২১ মিলিমিটার, ১৫ এপ্রিল দিনাজপুরে ৩৬ মিলিমিটার, ১৮ এপ্রিল তেঁতুলিয়ায় ৩৩ মিলিমিটার, ১৯ এপ্রিল মাদারীপুরে ১১৪ মিলিমিটার, ২০ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে ১৯৪ মিলিমিটার,  ২১ এপ্রিল দিনাজপুরে ৯৭ মিলিমিটার, ২২ এপ্রিল মাইজদিতে ৯৮ মিলিমিটার ও ২৩ এপ্রিল রাঙ্গামাটিতে ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

মার্চ-এপ্রিলের ঝড়-বৃষ্টির সময়গুলোতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানো ও অতি উচ্চ শব্দে অনেক বেশিসংখ্যক বজ্রপাত হতে দেখা যাচ্ছে, যা অন্য সময় এতটা দেখা যায় না। এ বিষয়ে কয়েকজন আবহাওয়াবিদ বলেন, আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এই সময়ের মেঘকে বলা হয় বজ্র মেঘ। অর্থাৎ এই সময়ের মেঘের মধ্যে ইলেকট্রিক চার্জ বেশি তৈরি হয়। এর ফলে মেঘের মধ্যের ধুলাবালি ও পানির অণুকণার পারস্পরিক ঘর্ষণে বেশি পরিমাণ ইলেকট্রিক চার্জ তৈরি হয়। এ অবস্থায় মেঘমালার ভেতরকার ইলেকট্রিক চার্জের মধ্যে পারস্পরিক ঘর্ষণ হয়। এতে প্রচুর তাপও উৎপন্ন হয়। ফলে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাতে দেখা যায়। এতে শব্দও হয় অতি উচ্চ। এ ধরনের ঘটনার সময় বাইরে না থাকা নিরাপদ বলে পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

তবে এবারের এপ্রিল মাসের ব্যতিক্রমী বৈরীআবহাওয়াকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলে মনে করছেন না আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার।

তিনি বলেন, ২০-৩০ বছরের ব্যবধানে আবহাওয়ার এমন রূপ থাকে। এবার বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয় দুর্বল থাকায় জলীয় বাষ্প বেশি থেকেছে টানা কিছুদিন, এতে ভারি বর্ষণ হয়েছে।

এ আবহাওয়াবিদ বলেন, উচ্চচাপ বলয় যত শক্তিশালী হয় কালবৈশাখী ঝড় তত কম হয়। এবার দুর্বল থাকার কারণে পুবালি-পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রণ বাংলাদেশের উপর বেশি সক্রিয় হয়েছে বলে বর্ষণ বেশি হচ্ছে।

তবে উচ্চচাপ বলয়ের দুর্বলতা কেটে যাওয়ায় আগামী দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টি কমে আসবে বলে মনে করেন সমরেন্দ্র কর্মকার।

তবে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় তাপমাত্রা বাড়লে তা উপরে উঠে মেঘ হয়ে ফের মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।

অসময়ের ভারি বর্ষণের সঙ্গে হাওর অঞ্চলের আকস্মিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিতে এবার জনদুর্ভোগ শুরু হয়েছে বর্ষার আগেই।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.