Sylhet Today 24 PRINT

বিচারপতি জয়নুলের বিচার বন্ধের চিঠি নিয়ে রুলের শুনানি শুরু

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ অক্টোবর, ২০১৭

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুদককে দেয়া চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, একটি রায় হলেই তার সমালোচনা-আলোচনা করা হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে হল কিনা, দেখা হচ্ছে। পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক আর বিপক্ষে গেলে ফরমায়েশি হয়ে যাচ্ছে। রায়ের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, ধর্মঘট হচ্ছে। আমাদের (বিচারপতি) রাস্তায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। আগামী ২৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি হবে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান তরফদার অংশ নেন।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে তিন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন বিচারক সাংবিধানিক পদে ছিলেন বলে দায়মুক্তি পেতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে যেমনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, ঠিক তেমনই সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠি।

তিনি বলেন, ফুলকোর্টের সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রধান বিচারপতি এভাবে চিঠি দিতে পারেন না। এ চিঠি দেয়ার এখতিয়ার নেই প্রধান বিচারপতির। এর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে এ চিঠি দেয়া হয়েছে।

আদালত জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কোনো আদেশের বিচার করার এখতিয়ার হাই কোর্টের আছে কিনা? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ক্ষমতাবহির্ভূত কোনো আদেশ দেয়া হলে তা দেখার এখতিয়ার হাই কোর্টের রয়েছে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সব তথ্যই দুদককে দিয়েছে, তারপরও এ বিষয়ে আদেশ থাকা প্রয়োজন।

শুনানিতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্ত করা সমীচীন হবে না। দুদককে অনুসন্ধান বা তদন্ত বন্ধ করতে বলেননি। আর চিঠির পর দুদক থেমেও থাকেনি। তারা তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। সুপ্রিম কোর্টও সব তথ্য দিয়েছে। ওই চিঠির আর কার্যকারিতা নেই।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যই এ চিঠি, ব্যক্তিকে রক্ষার জন্য নয়। তিনি বলেন, দুদক ৪-৫ বছর ধরে তাকে হয়রানি করেছে। সম্পদের তথ্য চেয়েছে। বিচারপতি জয়নুল আবেদীন কয়েকদফা সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। এরপর গত ৭ বছর দুদক চুপচাপ ছিল। এখন আবার তথ্য চেয়েছে। এর উদ্দেশ্য কী?

আদালত কাউকে দায়মুক্তি দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে মইনুল হোসেন বলেন, চিঠিতে তো বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দায়মুক্তি দেয়া হয়নি।

খুরশীদ আলম খান বলেন, প্রশ্ন হল, সুপ্রিম কোর্ট দুদককে এ ধরনের চিঠি দিতে পারেন কিনা? তিনি বলেন, দুদক আইনের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী দুদকের কাজে বাধার সৃষ্টির জন্য ৩ বছর সাজা হতে পারে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠির ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত না পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে অন্যরাও সুযোগ নেবে।

শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে ফের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে দুদককে চিঠি দিয়েছেন। এ কারণে তার শপথ ভঙ্গ হয়েছে। কারণ সংবিধানের বিধান অনুযায়ী রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করলে তাতে শপথ ভঙ্গ হয়ে যায়।

সাংবিধানিক পদে থাকার পরও প্রচলিত আইনে অনুসন্ধান করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন। আমিও বলেছি। কিছু কিছু অপরাধ আছে, যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সুরাহা হওয়া উচিত। একজন আরেকজনকে খুন করে ফেললে সে বলতে পারে না যে সে সাংবিধানিক পদে আছে। তাকে কিছু করা যাবে না। মানি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধও যদি কেউ করেন। তিনি সাংবিধানিক পদে থাকলেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলতে বাধা নেই।

গত ৯ অক্টোবর সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দুর্নীতির অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের চিঠি কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাই কোর্ট।

২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত চিঠি দুদককে দেয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামান তফাদার চিঠিটি নজরে আনলে আদালত রুল জারি করেন।

দুদকে জয়নুল আবেদীনের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই ও অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে তার চাকরির মেয়াদসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও বেতন-ভাতা, অবসর সুবিধা খাতে গৃহীত অর্থের বিবরণী চেয়ে ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চিঠি দেয় দুদক।

এর জবাবে সুপ্রিম কোর্ট দুদককে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে, বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অনেক মামলার রায় দেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি প্রদত্ত রায় সবার ওপর বাধ্যকর। এহেন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার প্রদত্ত রায়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। ফলে জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না মর্মে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে নোটিশ দেয় দুদক। ওই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে তিনি ওই বছরের ২৫ জুলাই হাই কোর্টে রিট আবেদন করলেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়। পরে ওই বছরের ২৫ অক্টোবর দুদক আবার সম্পদের হিসাব দাখিল করতে নোটিশ দিলেও বিষয়টি থেমে ছিল।

গত জানুয়ারিতে আবার তাকে নোটিশ দিয়ে আগের সম্পদের হিসাব স্পষ্ট করতে দুদকে হাজির হতে বলা হয়। পাশাপাশি তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেয়। এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। ১০ জুলাই হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.