Sylhet Today 24 PRINT

তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

নিউজ ডেস্ক |  ৩১ মে, ২০১৫

আগামী ২২ জুলাই একই মামলার আসামি ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
  
রোববার (৩১ মে) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি শুরুর এ আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। আসামিপক্ষে ছিলেন মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের আইনজীবী মো. মাসুদ রানা।  

গত ২৫ মে মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে।

২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একই মামলার আসামি মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে গত ২৮ এপ্রিল শেষ করেন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুর হোসেন। ২৯ এপ্রিল ধানমণ্ডি কার্যালয় সেফহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের স্বার্থে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেফতারের আবেদন জানান প্রসিকিউশন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

এর পর পরই বেলা ১২টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি এলাকা থেকে খাগাউড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া (৭০) ও তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে(৬৫) গ্রেফতার করে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। ১২ ফেব্রুয়ারি হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত ১১ মার্চ রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংস্থা।

গত ৩০ এপ্রিল একই মামলার আসামি মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। সে সময় এ মামলার তদন্তকালে আব্দুর রাজ্জাকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান প্রসিকিউশন।

১৭ মে রাজ্জাককেও এ মামলার আসামি করে তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও তাপস কান্তি বল। এদিন আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। 

১৯ মে মৌলভীবাজার জেলা সদরের আতানগিরি পাহাড় থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করে বানিয়াচং থানা পুলিশ। ২০ মে তাকে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।

২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪ এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলাটি (নং- ২৭০/০৯) দায়ের করেন।

বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

তিনজনের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, নবীগঞ্জের কুমুরশামা গ্রামের বাসিন্দা মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে বড় ভাই ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও ছোট ভাই ছিলেন রাজাকার কমান্ডার। তাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাদের চাচাতো ভাই বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক। আসামিরা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে ফেলেন আসামিরা।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে,  তারা মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি মরহুম মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যান এবং ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেন।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে,  একই দিন বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে করে আত্মহত্যা করেন।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে,  একাত্তর সালের বাংলা ভাদ্র মাসের যেকোনো দিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান তারা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যান আনছার আলী।

এসব অভিযোগের সপক্ষে ২১ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন তিন আসামির বিরুদ্ধে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.