Sylhet Today 24 PRINT

বিমান দুর্ঘটনা: নিহতদের মধ্যে ২৩ জন বাংলাদেশি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৩ মার্চ, ২০১৮

কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিতে বাংলাদেশের যে ৩২ জন যাত্রী ছিলেন, তাদের মধ্যে দুই শিশুসহ ২৩ জন মারা গেছেন বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন।

এছাড়া নয়জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তারা কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন; তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

সোমবার দুপুরে কাঠমান্ডুতে এই দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালসহ দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট তথ্য না মেলায় যাত্রীদের স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে হতাহতদের খবর জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

বেসরকারি বিমান সংস্থাটির উড়োজাহাজটিতে যে চারজন ক্রু ছিলেন তাদের মধ্যে প্রধান বৈমানিক আবিদ সুলতান বেঁচে আছেন। তিনি কাঠমান্ডুর নরভিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বাকি তিন ক্রুর মধ্যে কো পাইলট পৃথুলা রশিদ এবং ক্রু খাজা হোসেনের নাম কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দেওয়া মৃতদের তালিকায় রয়েছে।

আরেক ক্রু কে এইচ এম শফি জীবিত আছেন বলে ধারণার কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম; তবে তার দেখা কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা রাত পর্যন্ত পাননি।

যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে বিমানটিতে মোট বাংলাদেশি ছিলেন ৩৬ জন; তার মধ্যে ২৫ জন মারা গেছেন।

বিমানটিতে মোট যাত্রী ছিলেন ৬৮ জন; ৩২ বাংলাদেশি ছাড়া একজন ছিলেন মালদ্বীপের এবং একজন ছিলেন চীনের; বাকিরা সবাই ছিলেন নেপালি।

নেপালিদের মধ্যে সিলেটে রাগীব-রায়েয়া মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া ১৩ শিক্ষার্থীও ছিলেন। তাদের মধ্যে দু'জন বেঁচে আছেন বলে জানা গেছে।

নেপালের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই বিমান দুর্ঘটনায় মোট ৪৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২২ জন।

বাংলাদেশি জীবিত যাত্রী

ইমরানা কবির হাসি, সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, মেহেদী হাসান, আলমুন নাহার অ্যানি, শাহরিন আহমেদ, মো. শাহীন বেপারি, কবির হোসেন, রিজওয়ানুল হক ও শেখ রাশেদ রুবাইয়াত।

এদের মধ্যে স্বর্ণা (২৫) আহত আরেকজন মেহেদী হাসানের (৩৩) স্ত্রী। ব্যবসায়ী মেহেদীর বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামে।

এই দম্পতি তাদের আত্মীয় আরেক দম্পতির সঙ্গে ভ্রমণের উদ্দেশে নেপালে রওনা হয়েছিলেন। আহত আলমুন নাহার অ্যানি (২৫) আহত মেহেদীর ফুপাত ভাই  ফারুক হোসেন প্রিয়কের স্ত্রী।

স্ত্রী ও শিশু সন্তান প্রিয়ন্ময়ী তামারাকে নিয়ে নেপাল রওনা হয়েছিলেন আলোকচিত্রী প্রিয়ক। দুর্ঘটনায় প্রিয়ক ও তার তিন বছরের মেয়ে তামারার মৃত্যু হলেও বেঁচে গেছেন অ্যানি।

রাজশাহীর রুয়েটের সিএসই বিভাগের প্রভাষক ইমরানা কবির হাসি বেঁচে গেলেও মারা গেছেন তার স্বামী রকিবুল হাসান। হাসি যাত্রা শুরুর আগে ফেইসবুকে লিখেছিলেন- ‘ভ্যাকেশন স্টার্টস নাউ’।

বাংলাদেশি নিহত

রকিবুল হাসান, ফারুক আহমেদ প্রিয়ক, তার মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী তামারা (শিশু), রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা, তাদের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান (শিশু), নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, বেগম উম্মে সালমা, ফয়সাল আহমেদ, ইয়াকুব আলী, আলিফুজ্জামান, বিলকিস আরা, নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, মেহনাজ বিন নাসির,  মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানভিন শশী রেজা, পিয়াস রায় ও মো. নুরুজ্জামান।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ছেলে রকিবুল ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী ছিলেন। রুয়েটেই পড়তেন তিনি; বিয়েও করেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিকে। দুজনই যাচ্ছিলেন নেপালে।

রকিবুলের চাচাত ভাই চৌহালীর বাগুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী জানান, ১৫ দিনের জন্য তারা নেপালে বেড়াতে যাচ্ছিলেন।

রফিক জামান, সানজিদা হক ও অনিরুদ্ধ; এই পরিবারটি এখন নেই

রফিক জামান, সানজিদা হক ও অনিরুদ্ধ; এই পরিবারটি এখন নেই

ছয় বছরের ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন সানজিদা বিপাশা ও রফিক জামান রিমু।

বিপাশা একটি বেসরকারি সংস্থায় জনসংযোগ শাখার দায়িত্ব পালন করতেন। এক সময় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ‍রিমু প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করতেন। এই দুর্ঘটনায় তাদের পুরো পরিবারও হারিয়ে গেলেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী ও বেগম উম্মে সালমা একটি কর্মশালায় অংশ নিতে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন।

গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী পিয়াস রায় কলেজ ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।

যাত্রা শুরুর একটি ছবি পোস্ট করে ফেইসবুকে তিনি লিখেছিলেন, ‘টাটা মাই কান্ট্রি, ফর ফাইভ ডেজ। হেইলিং টু দ্য ল্যান্ড অফ দ্য এভারেস্ট’।

ফয়সাল আহমেদ (৩১) ছিলেন বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া গ্রামের সামসুদ্দিন সরদারের ছেলে তিনি। ফয়সাল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারীর আত্মীয়। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। ফলে নিহতদের শনাক্ত করা কঠিন হবে বলে ধারণার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইউএস-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ সাংবাদিকদের বলেছেন, “আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের দেশে ফিরিয়ে আনবে ইউএস বাংলা।”

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.