Sylhet Today 24 PRINT

‘আইনি পরামর্শ দেওয়ায়’ ইয়াবা-অস্ত্রসহ প্রবীণ আইনজীবী গ্রেপ্তার!

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩০ মে, ২০১৮

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জমি নিয়ে বিবাদে জড়িত একজন প্রবাসীর পক্ষ নিয়ে ষাটোর্ধ এক ব্যক্তিকে ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

গ্রেপ্তার সমর চৌধুরী গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম জর্জ কোর্টে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। অনেক আগে এলএলবি পাশ করা সমর আগে একটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।

গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীতে একটি জমি নিয়ে বিরোধে জড়িত সঞ্জয় দাশ নামের একজনের ‘প্ররোচনায়’ পুলিশ রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়েছে বলে অভিযোগ সমরের পরিবারের।

তবে পুলিশ বলছে, সমরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিছানার নিচে ইয়াবা ও অস্ত্র পাওয়া যায়।

পুলিশের এই বক্তব্য ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ দাবি করে সমরের মেয়ে তমালিকা চৌধুরী বলেন, অনেক বছর ধরে তাদের পরিবার চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকানন এলাকায় থাকেন। দীর্ঘদিন তার বাবা গ্রামের বাড়িতে যান না।

অথচ রোববার তার বাবাকে গ্রেপ্তারের পর গভীর রাতে বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ সারোয়াতলীতে তাদের গ্রামের বাড়ি থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৬০টি ইয়াবা উদ্ধার দেখানো হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় সাদা পোশাকের কিছু লোক নগরীর হকার্স মার্কেট এলাকা থেকে সমর চৌধুরীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় বলে জানান তমালিকা।

তিনি বলেন, “রাতে বাবাকে পুলিশ চোখ বেঁধে সারোয়াতলীর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখায়।”

তাদের গ্রামের প্রতিবেশী স্বপন দাশ ও তার ভাইপো লন্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশের জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পুলিশ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বোয়ালখালী থানার ওসি হিমাংশু দাশ রানা বলেন, সমর চৌধুরী আগের একটি মাদক মামলার পলাতক আসামি। রোববার তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

“জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার বাড়িতে অস্ত্র ও ইয়াবা থাকার কথা স্বীকার করলে তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।”

তবে তমালিকা বলছেন, তার বাবা গ্রামের ওই জমি নিয়ে স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় তার ভাতিজা সঞ্জয় ক্ষুব্ধ হন।

“স্বপন মামলা করলে সঞ্জয় মনে করেছে, আমার বাবার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে সে মামলাগুলো করেছে। স্বপন মামলা তুলতে রাজি না হওয়ায় তিনি এখন বাবাকে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছেন।”

তমালিকা বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসেও সঞ্জয় পুলিশ নিয়ে তাদের বাসায় গিয়েছিলেন।

“আমাদের ঘরে ইয়াবা আছে বলে অভিযোগ করে। স্বপন মামলা প্রত্যাহার না করলে বাবা ও আমাদের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছিলেন।”

ওই তার বাবার বিরুদ্ধে একটি মাদকের (ইয়াবা) মামলা হলে তিনি তাতে জামিন নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তমালিকা।

তিনি বলেন, জামিনের পর তার বাবা বোয়ালখালী থানার ওসি ও সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সঞ্জয়ের সঙ্গে জায়গা জমির এ বিরোধের জেরে তার চাচাত ভাই স্বপনের পরিবারের বিভিন্নজন মামলায় আসামি হয়েছে। শংকর নামে স্বপনের বাড়ির একজন পাহারাদার ইয়াবাপাচারের এবং তার স্ত্রী এখন চুরির মামলার আসামি।

চট্টগ্রাম শহরে ওষুধের দোকান রয়েছে স্বপনের। আর লন্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় বর্তমানে দেশে আছেন।

তার প্ররোচনায় সমরকে ফাঁসানোর অভিযোগ নাকচ করে বোয়ালখালীর ওসি হিমাংশু বলেন, সঞ্জয় নামে কাউকে তিনি চেনেন না এবং ‘কারও দ্বারা প্ররোচিত’ হয়ে মামলা নেননি। প্রকৃত আসামিকেই তিনি গ্রেপ্তার করেছেন।

যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সঞ্জয় দাশও। তিনি বলেন, “সমর চৌধুরী নামে কাউকে আমি চিনি না।

“আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে (স্বপনের সঙ্গে) কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা আমরা পারিবারিকভাবে সমাধান করেছি। আমাদের পারিবারিক বিষয়ে সমর চৌধুরী কেন আসবে?”

এদিকে সমর চৌধুরীর মুক্তি দাবিতে মঙ্গলবার বিকালে বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এ সময় তার দুই মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী, তমালিকা চৌধুরী ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বিডিনিউজ

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.