Sylhet Today 24 PRINT

আপত্তি উপেক্ষা করেই পাস হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তি সত্ত্বেও বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রেখে জাতীয় সংসদে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। কিন্তু তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসরাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, মো. ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, বেগম মাহজাবীন মোরশেদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও মোহাম্মদ নোমান এবং স্বতন্ত্র সদস্য ডা. মো. রুস্তম আলী ফরাজী। তারা ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য বিলটি প্রচারের দাবি জানান। এছাড়া বিরোধী দলীয় সদস্যরা বিলের ১৩টি ধারায় সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়নি।

বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব উত্থাপনকালে মো. ফখরুল ইমাম বলেন, বিলে স্টেকহোল্ডারদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বাক স্বাধীনতার জন্য এটা উদ্বেগজনক। এটা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিল। গণমাধ্যমের উদ্বেগ ও মতামত উপেক্ষা করাই স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধার সৃষ্টি করবে। দেশে সুশাসনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো এই বিলের কারণে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিলে গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি।

নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী বলেন, বিলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমি এই কমিটির একজন সদস্য। বিলটি নিয়ে যাচাই বাছাইয়ের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে অনেক যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তাই আমি আমার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। একইসঙ্গে বিলটি পাস করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি। প্রস্তাব দেওয়া অন্যান্য এমপিরা তাদের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

জনমত যাচাই-বাছাই প্রসঙ্গে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই বিলটি পাসের জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রক্ষার জন্য ডিজিটাল আইন আমরা সবার আগে তৈরি করছি। পৃথিবীর বহু দেশকে এই আইনটি অনুসরণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এটা ঐতিহাসিক আইন।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ হবে না। যুদ্ধ হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তাই কোনভাবে আমরা রাষ্ট্রকে বিপন্ন হতে দিতে পারি না।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য এই আইন নয়। মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন ধরনের বাধা যেনো না থাকে তাই এই আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিলটি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কি পরিমাণ আলোচনা করেছি, তাদের কথা শুনেছি তা এই বিলের রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে। আমরা তাদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। তারা যেসব জায়গায় যে ধরণের সংশোধনী দেওয়া দরকার সেই অনুসারে সবকিছু আমরা করেছি।

সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির কাছে যেসব কথা বলেছেন তা হয়তো তারা ভুলে গেছেন। যদি তারা ভুলে না গিয়ে থাকেন তাহলে তাদের সমালোচনার অবস্থা থাকে না। আইনটিকে বিতর্কিত করার কোন সুযোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন।

বিভিন্ন মহলের আপত্তি সত্ত্বেও গত ৯ এপ্রিল বহুল আলোচিত ’ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। এরপর বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সংসদীয় কমিটি কয়েকদফা বৈঠক করে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণের পর বিলটি চূড়ান্ত করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিলটি পাসের সুপারিশ সংসদে প্রতিবেদন জমা দেয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.