Sylhet Today 24 PRINT

আগে হাতেখড়ি ছাড়া রাজনীতিবিদ হওয়া ঠিক নয়: রাষ্ট্রপতি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৬ অক্টোবর, ২০১৮

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যদি রাজনীতি করতে চান তবে লেখাপড়া শেষ করে অন্য কোনো চাকরি না নিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ুন। আগে হাতেখড়ি ছাড়া রাতারাতি রাজনীতিবিদ হওয়া ঠিক নয়। যারা তরুণ বয়স থেকে রাজনীতি করবেন, রাজনীতিতে তাদেরই অগ্রাধিকার থাকা উচিত।

শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমাদের গ্রামে প্রবাদ আছে গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ (ভাবি)। রাজনীতিও হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো। যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, বাধা নাই।'

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত আবদুল হামিদ তার লিখিত বক্তব্যের বাইরে সমাবর্তনে একথা বলেন। এসময় অংশগ্রহণকারীরা হাসিতে ফেটে পড়েন।

রাষ্ট্রপতি ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতির সাথে বর্তমান ছাত্র রাজনীতির তুলনা করে বলেন, ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ছিল সম্পূর্ণ আদর্শভিত্তিক। সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠির স্বার্থ মুখ্য ছিল না।

কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, 'আমি যদি বলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের লেকচারার হইতাম চাই, নিশ্চয়ই ভিসি সাহেব আমারে নেবেন না। বা কোনো হাসপাতালে গিয়া বলি, এতদিন রাজনীতি করছি, হাসপাতালে ডাক্তারি করতে দেন। বোঝেন অবস্থাটা কী হবে? এগুলো বললে হাসির পাত্র হওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। যদি বলি এত বছর রাজনীতি করছি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুপারিন্টেনডেন্টের পদ দিতে পার। সেখানে আমাকে দিবে? কিন্তু রাজনীতি গরিবের ভাউজ।'

আবদুল হামিদ বলেন, ভিসি সাহেবও অবসরের পর রাজনীতি করবেন। যারা সরকারি চাকরি করেন... জজ সাহেব যারা আছেন ৬৭ বছর চাকরি করবেন। রিটায়ারের পর বলবেন, 'আমিও রাজনীতিবিদ'। আর্মির জেনারেল, সেনাপ্রধান, সরকারি সচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, কেবিনেট সেক্রেটারি রিটায়ার কইরা বলেন, 'আমি রাজনীতি করবো।' কোন রাখঢাক নাই। যার ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা তখনই রাজনীতিতে ঢোকে।'

রাষ্ট্রপতি বলেন, 'চাকরি করে যা করার করছে। এরপর বলছে রাজনীতি করবো। আমার মনে হয় সকল রাজনৈতিক দলকে এটা চিন্তা করা উচিত। হ্যাঁ এক্সপার্টের দরকার আছে। অনেক সময় বলা হয় পেশাভিত্তিক পার্লামেন্ট। হ্যাঁ পেশাভিত্তিক করেন। এমবিবিএস পাস করে সরাসরি রাজনীতি করেন। কোনো অসুবিধা নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকরিতে না ঢুকে সরাসরি রাজনীতিতে ঢোকেন।'

তিনি বলেন, 'পুলিশের ঊর্ধ্বতন ডিআইজি, আইজিরাও রাজনীতি করবেন। মনে মনে কই, রাজনীতি করার সময় এই পুলিশ তোমার বাহিনী দিয়ে পাছার মধ্যে বাড়ি দিছো। তুমি আবার আমার লগে আইছো রাজনীতি করতে। কই যামু। রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এই যে রাজনীতিবিদদের সমস্যা এই সমস্যার কারণও এটা। বিজনেসম্যানরা তো আছেই... শিল্পপতি-ভগ্নিপতিদের আগমন এভাবে হয়ে যায়। এগুলো থামানো দরকার।'

এসময় ঢাবি ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ। তিনি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করে এই নির্বাচন কেউ যাতে ভণ্ডুল করতে না পারে, এ লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহবান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, ডাকসু নির্বাচন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে।

রসিকতা করে তিনি বলেন, 'আপনারা প্রেমপত্রকে বিসর্জন দিছেন। প্রেমের সাহিত্য তো মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়ে যাচ্ছে। প্রেমপত্র লেখার চর্চাটা অন্তত রাখেন। তাহলে প্রেমপত্রে সাহিত্য বেঁচে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। ছোটবাচ্চাদের মোবাইল দিয়ে বসায়া রাখে। এইটাও চিন্তা-ভাবনার বিষয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।'

সমাবর্তনের লিখিত বক্তব্যে গুণগত মান সমুন্নত রেখে দেশের চাহিদা ও বিশ্বের জনশক্তি বাজারের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর সম্প্রসারণ করার পক্ষে মত দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, 'অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোকে যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, এ সংযোজন, বিয়োজন বা সম্প্রসারণ যাতে কোনো ব্যক্তি বা কতিপয় লোকের স্বার্থে না হয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে হয়।'

রাষ্ট্রপতি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতির প্রত্যাশা পূরণে সর্বদাই একজন চালকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি সময়ের চাহিদা এবং বৈশ্বিক জনশক্তির বাজারের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন বিভাগ সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সমাবর্তন বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন। সমাবর্তনে মোট ২১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন এবং এদের মধ্যে ৭২ জন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যগণ জাতীয় অধ্যাপকগণ, ঢাবি সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্যগণ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাবি সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.