Sylhet Today 24 PRINT

১০০ কোটি টাকা শোধ করতে সরকারকে ২ মাস সময়

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৮ অক্টোবর, ২০১৮

রাজধানীর পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের জমি ও তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার মূল্য বাবদ ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা মূল মালিককে পরিশোধের জন্য সরকারকে দুই মাস সময় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এদিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে জানান, মুন সিনেমা হলের মালিক ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ওই অর্থ দিতে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে। অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়ার জন্য তিনি তিন মাস সময় চাইলে আদালত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। মুন সিনেমা হলের মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও সাইফুল্লাহ মামুন।

এই অর্থ পরিশোধের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির চিঠি আদালতে উপস্থাপন করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এ মামলা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। আর কত দিন ঘুরাবেন। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে টাকা পেলেই তা ইটালিয়ান মার্বেলকে দিয়ে দেবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

একরামুল হক টুটুল জানান, আগামী ৯ ডিসেম্বর মামলাটি আবারও আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে।

মুন সিনেমা হলটি ছিল পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে, যার মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয়। পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়।

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের একটি সামরিক ফরমানে ঘোষণা করা হয়, সরকার কোনো সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়।

এরপর ২০০০ সালে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করে ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস। রিটে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাই কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের রায় বহাল রাখেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

এরপর দীর্ঘ দিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি তখনকার ভূমিসচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে ইতালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ।

ওই অভিযোগের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৯৭২ সালে মুন সিনেমা হল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০১ সালে প্রতীকী মূল্য ১ টাকা দরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তা ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর কর। ডেভেলপাররা মূল সিনেমা হলটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এবং নিজেদের অংশ বর্তমান দোকান মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে মত দেন, মুন সিনেমা হল আগের অবস্থায় ফেরত দেওয়ার কোনো উপায় না থাকায় জমির মূল্য ও মুন সিনেমা হলের মূল কাঠামোর মূল্য ধরে এর মালিককে দেওয়া যেতে পারে।

ওই শুনানির পর আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়। তিনি মুন সিনেমা হল ও এর জায়গার মূল্য ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেন।

প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের মালিককে ওই অর্থ তিন কিস্তিতে পরিশোধের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু এত টাকা দিতে অপারগ উল্লেখ করে সরকারকে এ দায় শোধ করতে বলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। এরপর নির্ধারিত সময়ে অর্থ পরিশোধ না করায় গত ১ জুলাই দ্রুত অর্থ পরিশোধের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিক নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এক চিঠি মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে উপস্থাপন করেছেন। এতে জানানো হয়েছে, সংশোধিত বাজেট থেকে ওই অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.