Sylhet Today 24 PRINT

চা-বাগানে ভোটের হাওয়া

হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল |  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। মেঠোপথ গেছে এঁকেবেঁকে। পথের ধারে কোথাও সারি সারি মাটির ঘর, কোথাও চায়ের দোকান, কোথাও বা  উপাসনালয় ও বিদ্যালয়। ভোরের আলো ফুটতেই দেখা যায় কুয়াশা ভেদ করে হেটে যাচ্ছেন শ্রমিকরা, চা-পাতা তুলতে। চা-বাগানের এ চিত্রই সবসময় চোখে পড়ে। কিন্তু এখন বাগানে বাগানে অন্য রকম আমেজ। সব কোলাহল ছাপিয়ে বাতাসে ভাসছে মাইকের আওয়াজ। সর্বত্রই এখন ভোটের স্লোগান।

সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ভাড়াউড়া চা-বাগানে গিয়ে দেখা গেল এ রকম আমেজ। নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন উৎসবের সমারোহ। চা-বাগানের মধ্যে অবস্থিত দোকান ঘর, মাটির ঘর, বিদ্যালয় ও গাছের গায়ে সাঁটানো প্রার্থীদের পোস্টারই বলে দেয় নির্বাচন আসন্ন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনে চা-বাগান আছে প্রায় ৭০টির মতো। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে এখন চা-বাগানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, চা-শ্রমিক ভোটারদের ঘরে ঘরে সব প্রার্থীর প্রতিযোগিতামূলক আনাগোনায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন ৷ এই ভোটারদের মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক চা-শ্রমিক ভোটার রয়েছেন যারাই মূলত এই আসনের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেন।

চা-বাগানের মধ্যেই একটি চায়ের দোকানে আলাপ করছিলেন দুলাল হাজরা। তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চা-শ্রমিকরা আগের মতো পিছিয়ে নেই। গত দশ বছরে চা-বাগানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে বেশীর ভাগ চা-বাগান। তাই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে বর্তমান সরকারকেই ক্ষমতায় দেখতে চান তিনি।

ভাড়াউড়া বাগানে কারখানা থেকে মেঠোপথ ধরে ঘরে ফিরছিলেন নতুন ভোটার তরুণী দিপালী তাতি। তিনি জানান, ইবার পরথম ভুট দিমু, যে ভালা মানুস তারেই আমি ভুট দিমু (এবার প্রথম ভোট দেবো, যে ভালো মানুষ তাকেই ভোট দেবো)।

এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ১৯৯১ সাল থেকে টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর রহমান, উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে গণফোরামের প্রার্থী হয়েছেন শান্তিপদ ঘোষ। আর হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রচারণা করছেন ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা সালাউদ্দিন।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, নির্বাচনে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যেই মূল লড়াইটি সীমাবদ্ধ থাকবে।

ভাড়াউড়ার পাশের বাগানটি হচ্ছে জাগছড়া চা-বাগান। এই এলাকায়ও চলছে প্রার্থীদের তুমুল প্রচার। ভুড়ভুড়িয়া, ফুলছড়া, সাতগাঁও, মির্জাপুর চা-বাগানেও প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ভাড়াউড়া থেকে জাগছড়া ও ভুজ়ভুড়িয়া যাওয়ার পথে টিলার ওপর সবুজ বাগানের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়লো শত শত পোস্টারে।

জাগছড়া চা-বাগান থেকে মাজদিহী চা-বাগানের ভেতর ঢুকেই চোখ পড়ে দুর্গা মন্দির। বয়ষ্ক চা শ্রমিক প্রদীপ রিকিয়াশন কথা বলছিলেন নির্বাচন নিয়ে। তিনি জানালেন, স্বাধীনতার পর থেকেই ভোট দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমাদের জীবনমানের কোন উন্নয়ন হয়নি। এবার যে প্রার্থী আমাদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিবে তাকেই এবার ভোট দিবো।

প্রচলিত ধারণা, চা শ্রমিকরা বংশপরম্পরায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির পক্ষেই ভোট দিয়ে থাকে। এ কারণেই প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীরা এই শ্রমিকদের মন জয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.