Sylhet Today 24 PRINT

অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে গেলেন সার্জেন্ট তপু!

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

লাশের খোঁজে সবাই তখন ব্যস্ত তখন সার্জেন্ট তৈয়েবুর রহমান তপু তখন খুঁজছিলেন একটি মোটরসাইকেল। শেষ পর্যন্ত মোটরসাইকেলটি খুঁজে পেলেন তৈয়েবুর।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাতটার দিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ধ্বংসস্তূপে দেখা যায় তাকে।

তিনি বলেন, ‘ভাগ্যগুণে আমি গতকাল বেঁচে গেছি। ভয়াবহ এই আগুনের মধ্যে আমিও পড়েছিলাম। আমিও এখানে ওদের মতো মরে যেতে পারতাম।’

সার্জেন্ট তৈয়েবুরের সামনেই বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার গলির রাজ্জাক ভবনে আগুন লাগে। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি ভবনে।

অন্যদিনের মতো সার্জেন্ট তৈয়েবুর গতকাল রাতে সোয়ারীঘাটে দায়িত্ব পালন শেষে মোটরসাইকেলে করে চকবাজারের চুড়িহাট্টার গলি হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে আসার পর তিনি দেখেন, গলিতে ভয়াবহ যানজট। গলিতে ঠাসা মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কার ও ঠেলাগাড়ি। রাত সাড়ে ১০টার পর হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পান তৈয়েবুর।

তৈয়েবুর বলছিলেন, ‘বিস্ফোরণের পর আমি যেখানে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই সেই জায়গাটা রাজ্জাক ভবন থেকে ২০-২২ ফুট দূরে। আমি বাইক থেকে পড়ে গিয়ে যদি বাইক উঠতে যেতাম, তাহলেই পুড়ে মরতাম।’

নিজের বাইকটি দেখিয়ে তৈয়েবুর বললেন, ‘মোটরসাইকেলটি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আমারও একই অবস্থা হওয়ার কথা ছিল। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’

সার্জেন্ট তৈয়েবুর জানান, ‘আমি তখন মসজিদের সামনে। বিকট আওয়াজের পর দেখি চারদিকে আগুন। পড়ে গেলাম। কীভাবে আমি যেন মসজিদের বাঁ পাশের চাপা গলি দিয়ে দৌড় দিলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি, চুড়িহাট্টা গলির রাস্তার সব গাড়ি পুড়ছে, ভবন পুড়ছে।’

আগুন থেকে বেঁচে যাওয়ার পরই তৈয়েবুর বাসায় ফেরেননি। রাত তিনটা পর্যন্ত চুড়িহাট্টা গলিতে দাঁড়িয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছেন।

তৈয়েবুর বললেন, ‘বিকট আওয়াজের ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে চুড়িহাট্টার গলিতে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। আমি যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে ১০ হাত দূরে থাকলে দৌড়ে পার পেতাম না। সঙ্গে সঙ্গে আগুনে পুড়ে আমি ওদের মতো লাশ হয়ে পড়ে থাকতাম।’

রাজ্জাক ভবনে লাগা আগুনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চুড়িহাট্টার হাজী ওয়াহেদ ভবন। রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এই ভবনে আগুনের শিখা জ্বলতে দেখা যায়। তবে রাত ৩টার পর আগুনের লেলিহান শিখা কিছুটা কমে আসে। তখন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাশের খোঁজ শুরু করেন।

এ সময় দেখা যায়, ওয়াহেদ ভবনের সামনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে একটি পিকআপ। আর পুরো গলির রাস্তায় আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে আছে অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল, তিনটি প্রাইভেট কার। রাস্তায় পরতে পরতে আগুনে পোড়া রিকশা, ভ্যান আর ঠেলাগাড়ি। টর্চের আলোয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রাস্তা থেকে পুড়ে যাওয়া লাশ খুঁজে বের করেন।

চুড়িহাট্টার গলির রাস্তায় যানজট ছিল। দুটি হোটেলে ভিড় ছিল। আগুন লাগার পর পাঁচটি ভবনে তা ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর চুড়িহাট্টার বাসিন্দাদের প্রায় সবাই রাস্তায় নেমে আসেন। দূর থেকে দেখতে থাকেন আগুনের শিখা। কিছুক্ষণ পরপর দ্রুম দ্রুম আওয়াজ আসতে থাকে।

তখন স্থানীয় লোকজন বলতে থাকেন, ‘ওয়াহিদ মিয়ার ভবনের নিচে কেমিক্যালের দোকান। সেখানে আছে বডি স্প্রের বোতল। বোতল ফুটে দ্রুম দ্রুম আওয়াজ আসছে।’

মোটরসাইকেল খুঁজে পাওয়া তৈয়েবুর ঘটনাস্থল ত্যাগ করার আগে জানান, ‘কপালগুণে আগুনের হাত থেকে আমি বেঁচে গেলাম।’

সূত্র: প্রথম আলো

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.