Sylhet Today 24 PRINT

রিজার্ভ চুরি: অর্থ ফেরতে মামলার পর সমঝোতার চেষ্টা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৫ মার্চ, ২০১৯

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কৌঁসুলি আজমালুল হোসেন কিউসি বলেছেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করার পর এবার ফিলিপিন্সের বিবাদীদের সঙ্গে সমঝোতা করে অর্থ ফেরত পাওয়ার চেষ্টা চালাবে বাংলাদেশ। এজন্য আইনজীবী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি দল আগামী সপ্তাহে ফিলিপিন্স যাচ্ছে।

সোমবার নিজেও এই দলে রয়েছেন জানিয়ে এই আইনজীবী ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের আইনি লড়াই চলছে। নিউইয়র্ক ফেডারেল কোর্টে মামলা শুরু করে দিয়েছি। আগামী ২ এপ্রিল মামলার তারিখ আছে।

তিনি বলেন, তার আগে যারা এই মামলার বিবাদী পক্ষ আছে, তাদের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছি। সমঝোতার মাধ্যমে যাতে বিষয়টির সম্মানজনক সমাধান হয়, সেজন্যই আলোচনায় বসতে যাচ্ছি।

আজমালুল বলেন, আমি এবং বাংলাদেশের কয়েকজন আইনজীবী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপিন্স যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে আমরা ফিলিপিন্স যাব। যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আলোচনায় বসে সমঝোতার মাধ্যমে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনা।

তিন বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের খোয়া যাওয়া সাড়ে ৬ কোটি ডলার উদ্ধারে ১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ফিলিপিন্সের এই বেসরকারি ব্যাংকটির কাছে এর আগেও অর্থ ফেরতের দাবি জানানো হয়েছিল, কিন্তু সাড়া মেলেনি। এখন মামলার তাদের উপর চাপ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।

সমঝোতার উদ্যোগ কাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে আজমালুল বলেন, উদ্যোগ বাংলাদেশ নিয়েছে। তাছাড়া যতটুকু জানতে পেরেছি অপর পক্ষের অনেকেই আলোচনায় বসতে আগ্রহী।

আলোচনায় টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো আশা করছি, আমাদের সব টাকাই ফেরত পাওয়া উচিৎ। এখন সেটা আইনি লড়াইয়ে পাব, না কি মধ্যস্থতা-সমঝোতার করে পাব, সেটাই এখন বিষয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌঁসুলি জানান, ফিলিপিন্সে যাওযার আগে ১০ মার্চ নিজেদের মধ্যে বসে আলোচনার কৌশল ঠিক করবেন।

১১ ও ১২ মার্চ মামলার বিবাদী, ফিলিপিন্সের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিভাগীয় বিচারক, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে প্রতিনিধি দলটি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।

বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।

অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিটেন্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মেলেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রিজার্ভের অর্থ চুরির কাজে ‘অজ্ঞাতনামা উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের’ সহায়তা নেয় আসামিরা। ‘নেস্টেগ’ ও ‘ম্যাকট্রাক’ এর মত ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কে ঢোকার জন্য পথ বের করে। পরে নিউইয়র্ক ফেড থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয় নিউইয়র্ক ও ফিলিপিন্সে আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে।

মামলায় রিজল ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডজনখানেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও’কনর।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে জেনেও অ্যাকাউন্ট খোলা, বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর এবং পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়গুলো ঘটতে দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপিন্সে ঢোকার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে দেশটির সিনেট কমিটি তদন্ত শুরু করে। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার পর আরসিবিসি তাদের শাখা ম্যানেজর দেগিতোকে বরখাস্ত করে। আর ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে।

ওই সময় করা মামলায় ফিলিপিন্সের আদালত ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রাপাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলাতেও তাকে আসামি করা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.