Sylhet Today 24 PRINT

প্রাণনাশের হুমকি আর নিজ বাড়িতে নিরাপত্তাহীন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৯ আগস্ট, ২০১৫

নিজ বাড়িতে নিরাপত্তাহীন আর প্রাণনাশের হুমকির মুখে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চুর ঘনিষ্টজন দাবি করা যুবলীগ সদস্য পরিচয়দানকারী আবু সিদ্দিকের হুমকিতে প্রাণনাশের আশঙ্কায় আছেন মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেলুর রহমান এবং একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় পুরো পরিবার। থানা-পুলিশ-মামলা করেও কোন কাজ হয়নি। কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে যুবলীগের নাম ভাঙানো সে সন্ত্রাসী।

স্থানীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্যাতিত ও প্রাণনাশের হুমকির কথা জানাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেলুর রহমান-এর সন্তান সাইফুর রহমান মিশু। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মিশু সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের জামিনের প্রসঙ্গ এনে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানানোর পাশাপাশি সরকার ও প্রশাসনের কাছে সন্ত্রাসীদের কাছে নির্যাতিত এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্যে রাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা জনাব মোফাজ্জেলুর রহমান (মুজিব বাহিনী হতে প্রাপ্ত আঞ্চলিক কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি এর সাক্ষরিত সার্টিফিকেট নং-৯০১৬) এমনই একজন হতভাগা, যিনি সরাসরি রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে করে দেশতো স্বাধীন করেছেন ঠিকই তবে বিগত কয়েক বছর ধরে জীবনের সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হচ্ছেন স্থানীয় এক যুবলীগের সদস্য পরিচয়দানকারী সন্ত্রাসীর দ্বারা।

উক্ত সন্ত্রাসীর নাম আবু সিদ্দিক, যে নিজেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চুর ঘনিষ্টজন দাবী করে এবং প্রভা্ব খাটিয়ে বাবার কেনা জমিসহ ঘরটি জবর দখল করে রেখেছে।

বাবা ছাত্রাবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তার সৎ উপার্জন এবং সঞ্চয় দিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ আবিদর পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দক্ষিণ পাশে একখানা জমি ক্রয় করেন ২৪-১০-১৯৯৬ইং (খতিয়ান নং-৬১৫৯)।

উক্ত জমির দক্ষিণ পার্শ্বে বাবার কেনা জমির পূর্বের মালিক(জনাব আব্দুল আজিজ) এর বোন লায়লা বেগম এবং তার পুত্র আবু সিদ্দিক মোহাম্মদ সপরিবারে বসবাস করে আসছে। দীর্ঘদিন যাবত লায়লা বেগমের পুত্র আবু সিদ্দিক মোহাম্মদ এর চাপের মুখে আমার জমির পূর্ব পার্শ্বে আমাদের ক্রয়কৃত জমির উপর দিয়ে তাকে চলাচলের রাস্তা প্রদান করে বাবার জমির সীমানার ভেতরেই বাবা ২০০৬ সালে একখানা টিনশেড ঘর করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে দীর্ঘদিন যাবত তার বিভিন্ন রকম হুমকির কারণে উক্ত জমিতে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয়নি। অতঃপর দুইজনের জমির মাঝে যেই দেয়াল তা সম্পূর্ণ বাবা নিজ খরচে নির্মাণ করেন এবং উক্ত ব্যক্তির ঘরটিও সে জোরপূর্বক সেই দেয়ালে সাথেই করে।

অতঃপর সে তাকে চলাচলের জন্য দেওয়া স্থান দখল করে ঘর নির্মাণ করতে চাইলে সেসময় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা সে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এরপর হতে সে আমাদের সেই ঘরের ভাড়াটিয়ার শান্তিপূর্ণ বসবাসে বিভিন্ন রকম বাধা সৃষ্টি করতে শুরু করে, যা বাবা স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারকে ১০-০৬-২০০৭ইং এ লিখিত আকারে জানানোর পরে কিছুদিন সে চুপ থাকে।

এরপর আমাদের সেই ঘরে ভাড়াটিয়া বসবাস করছিলো শান্তিপূর্ণভাবেই এবং ২০১৩ সালে আবু সিদ্দিক মোহাম্মদের বিভিন্ন রকম আশালীন আচরণ এবং হুমকিতে ভীত হয়ে বসবাসরত ভাড়াটিয়া ঘর ছেড়ে চলে যায় এবং উক্ত ব্যক্তি আমার বাবার অনুমতি না নিয়েই চলাচলের রাস্তায় একখানা টিনের গেইট স্থাপন করে এবং আমাদের জমিতে/ঘরে ঢুকতে বাধা প্রদান করে। সে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন রকম হুমকি এবং মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে আসছে।

আমাদের মা দীর্ঘদিন যাবত ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং আমাদের পরিবার মা এর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কয়েক দিন যাবত আমাদের সেই ঘরে যেতে পারেনি এবং এই সুযোগে সে আমাদের জমির উপর ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করে। গত ৩ই আগষ্ট ২০১৪ইং আমি এবং আমার বোন, বাবার ক্রয়কৃত জমিতে প্রবেশ করতে চাইলে আবু সিদ্দিক আমাদের প্রবেশে বাধা দেয় এবং উক্ত জমিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

এমতাবস্থায় আমি এবং আমার বোন নিকটস্থ ডাবলমুরিং থানায় গিয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে বিস্তারিত জানালে তিনি আমাদের আদালতে যাবার পরামর্শ দেন। আমি সেদিন তার হুমকির কারণে ভীত হয়ে থানায় একখানা জিডি করি (জিডি নং-১৫৪, ০৩-০৮-২০১৪)।

পরদিন উক্ত থানার একজন কর্মকর্তা আমাদের জমি পরিদর্শনে এসে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আবু সিদ্দিককে পরদিন বিকেল ৩ টায় থানায় হাজির হবার জন্য জানিয়ে যান। পরদিন বিকেলে আমি, আমার বোন যথাসময়ে থানায় হাজির হয়ে অপেক্ষা করলে সে থানায় না আসায় থানার কর্মকর্তা আমাদের জানায় আমরা যেন আমাদের জমিতে যাই এবং সে এরপর কোন রকম বাধা প্রদান করলে আমরা যেন থানায় যোগাযোগ করি।

সেদিন থানা থেকে আমি এবং আমার বোন সরাসরি আমাদের জমিতে যাই। আমাদের জমির কাছেই বসবাসরত আমার এক বাল্যবন্ধুর সাথে দেখা হলে সেও আমাদের সাথে কিছুটা সময় দেয়। এমন অবস্থায়, আমি, আমার বোন এবং আমার সেই বাল্যবন্ধু জমি থেকে কিছুটা দূরে মেইন রোড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম এবং আবু সিদ্দিক অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা করে তার লোকজন নিয়ে। আমি, আমার বোন এবং আমার বন্ধু বেশ আহত হয়।

আমি থানায় ফোন করে জানালে তারা ফোর্স পাঠায় এবং আমি কর্মরত অফিসারকে আমার জিডির কথা জানানো সত্ত্বেও তিনি কোন পদক্ষেপ না নিয়ে আমাদের থানায় যেতে বলেন। আমি এবং আমার বোন ঐ মুহুর্তেই থানায় যাই। প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পরে আবু সিদ্দিক তার মা, স্ত্রী এবং আরো লোকজন নিয়ে থানায় গিয়ে নিজেকে যুবলীগ কর্মীর পরিচয় দিয়ে আমাদের নামে উলটো অভিযোগ করে যে আমরা তার মাকে মারধর করেছি। সেদিন আমরা থানায় আমাদের জমির সকল কাগজপত্র উপস্থিত কর্মকর্তাকে দেখালেও আবু সিদ্দিক তার জমির কোন কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হয়নি।

পরবর্তীতে থানায় আবারো তাকে কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বললেও সে তা করতে ব্যর্থ হয়। আমার পেশাগত কারণে আমি আমার কর্মস্থলে (সুইডেন) ফিরতে বাধ্য হই এবং পরবর্তীতে আমার বাসায় থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ এসে আমার বোনকে থানায় যেতে বলে। উক্ত পুলিশের কর্মকর্তা জানায় আমাদের নামে আবু সিদ্দিক মোহাম্মদ অভিযোগ করেছে আমরা নাকি তাদের মারধর করেছি। আমার বোন পরের দিন আদালতে গিয়ে আবু মোহাম্মদের নামে মামলা দায়ের করে। এতে করে হিতে বিপরীত হয়, এবং আবু সিদ্দিক মোহাম্মদ প্রকাশ্যে আমার পরিবারকে বিভিন্ন রকম হুমকি ধমকি দিতে থাকে। আমার অসুস্থ মা এবং অসহায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা বাবা নিতান্তই নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন।

বর্তমানে আমার পরিবার থেকে বার বার থানায় যোগাযোগ করা হলেও তাতে কোন সাহায্য পাচ্ছে না আমার পরিবার, উলটো থানা থেকে তাচ্ছিল্য করা হয় তাদের জানালে। আমার বাবা তার সমস্ত জীবনের সঞ্চয় দিয়ে এই জমি ক্রয় করেন, কিন্তু আবু সিদ্দিক মোহাম্মদ আমার বাবাকে সরাসরি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে যা থানায় জানানোর পরেও আমরা কোন রকম সহযোগীতা পাচ্ছি না।

উক্ত মামলায় সে গ্রেপ্তার হবার পরে আমাদের সে বাসায় আমাদের এক আত্মীয় সাময়িক বসবাস শুরু করে আমাদের সম্মতিতে। মামলায় জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসার পরে সে আমাদের ঘরে বসবাসরত আমাদের সেই আত্মীয়ের পরিবারের মহিলা সদস্যকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মারধর করে।

এই বিষয়ে তারা স্থানীয় থানায় এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিকট কোন রকম সাহায্য না পেয়ে আদালতে মামলা করে। সেই আবু সিদ্দিক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জামিন অযোগ্য মামলায় জামিন নিয়ে নেয় এবং সরাসরি আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের ঘোষণা দেয়। স্থানীয় লোকজন তার ভয়ে প্রকাশ্যে বিরুদ্ধাচারণ করতে না পারলেও মোটামুটি ঐ এলাকার লোকজন বেশ ভীত তার কারণে। প্রধান সড়কে আলতাফ হোসেন বাচ্চুর সমর্থনে ব্যানার ঝুলিয়ে সে ঘোষণা দেয় তাকে কেউ কিছুই করতে পারবে না।

আমার বাবা বাজার করতে গেলে সে রাস্তায় বাবাকে জানিয়ে দেয় ঐ ঘরের দাবী করলে সে প্রাণে মেরে ফেলবে আমাদের। এবং আলতাফ হোসেন বাচ্চুর আশ্রয়ে থাকার দরুন কেউই তাকে কিছুই করতে পারবে না। বাবা এর আগে একাধিকবার স্ট্রোক করেছেন এবং আজ বাজার থেকে ফিরে স্ট্রোক করে এখন হাসপাতালে আছেন।

এমন অবস্থায় আমাদের পরিবারের অন্য সকল সদস্যের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে কোন রকম প্রতিকার না পেয়ে আজ ফেসবুকে জানিয়ে দিলাম কি হচ্ছে। এই কারণেই এই ব্যক্তি একাত্তরে অস্ত্র ধরেছিলেন দেশ স্বাধীন করতে? এই কারণেই কি আমরা স্বপরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বেঁচে ছিলাম এই দেশে? এই কারণেই কি নিজের খেয়ে সারাক্ষণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার করি?

আমার বাবা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু তার সেই সংগ্রামের ত্যাগে আসা এই ভুখন্ডে থেকে তাকে তার পরিবারসহ উৎখাত যদি হতে হয় তাহলে তো অপমান করা হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই। লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগকেই। সরকার কি একটু দেখবেন আমাদের? ন্যায় বিচার দেবেন আমাদের?

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.