Sylhet Today 24 PRINT

তাহেরীর বিরুদ্ধে ধর্মকে ব্যঙ্গ করার মামলা খারিজ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

মুফতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী

ধর্মকে ব্যঙ্গ করে ওয়াজনসিহত করার অভিযোগে দাওয়াতে ইমানি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুফতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন মামলা খারিজের আদেশ দেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার আবেদনকারী ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী সদস্য মো. ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, তাহেরীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন দুদিন অপেক্ষমান রেখে আজ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

রোববার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে এ মামলার আবেদন করেছিলেন আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল। ওয়াজে ধর্মকে ব্যঙ্গ করে আত-তাহেরী এমন অভিযোগ আনা হয়।

রোববার বেলা পৌনে ২টায় আদালতের পেশকার মামলাটি বিচারকের সামনে উপস্থাপন করেন। এর পর বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারা মোতাবেক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

জবানবন্দিতে বাদী বলেন, ‘৩১ আগস্ট সকাল ১০টায় আমি চেম্বারে এসে দেখি মেঘনা টিভি সিএম নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ওয়াজে ইসলামকে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। সেই ওয়াজ করছিলেন মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী। ওয়াজে তাহেরী বলেন, ‘খান, ঢেলে দেই,’ যা সম্পূর্ণ অশ্লীল শব্দ।

বাদী বলেন, ‘চিশতি বিডি নামের আরেকটি ইউটিউব চ্যানেলে তাহেরী বলেছেন, ‘কিছু কিছু ইউটিউবার ধান্দাবাজ।’ বাদী বলেন, এ ছাড়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, আসামি একটি ওয়াজে বলেন, ‘ইউনিভার্সিটির কিছু মাইয়া আছে। হেরা মডেলিং করে। তোমরার কপালে বেহেশত নেই।’

বাদী বলেন, বিজ্ঞ আদালত আসামির এ বক্তব্য গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কে বেহেশতে যাবে আর কে যাবে না, সেটি একমাত্র ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহই জানেন।

বাদী আরও বলেন, তাহেরীর ‘বসেন বসেন বইসা যান, ঢেলে দেই’ এসব বাক্য ওয়াজে ব্যবহার করে তিনি ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ করেছেন। জিকিরের সময় এ রকম শব্দ উচ্চারণ ইসলামের কোথাও উল্লেখ নেই। ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী তাহেরীর এসব কর্মকাণ্ড মুনাফেকির শামিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাহেরী কোরআন ও হাদিস অবমাননা করেছেন বলেও দাবি করেন মামলার বাদী ইব্রাহিম।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক মাহফিলে কোনো ব্যক্তির উক্তি দিয়ে বিড়ি খাওয়ার একটি দোয়া শ্রোতাদের শোনান তাহেরী, যা ইসলামের কোথাও নেই। তার এসব বক্তব্যে ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ ও অবমাননা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাহেরীর এসব কর্মকাণ্ড ইসলামে বিদ’আত বলে গণ্য। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচারকারী নন, অপপ্রচারকারী। তাকে এখনই না থামালে মানুষ ধর্ম বিষয়ে ভুল অনুধাবন করবে জানিয়ে ইব্রাহিম বলেন, এ জন্যই তাহেরীর বিরুদ্ধে মামলা করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।

বাদীর জবানবন্দি শুনে ওইদন বিচারক বাদীকে বলেন, আসামির ওয়াজে আপনার মূল্যবোধে কি আঘাত হেনেছে? জবাবে বাদী বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি একজন মুসলমান হিসেবে আসামি আমার ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত এনেছে।’

বিচারক বাদীকে আবারও বলেন, ‘একেকজন একেক রকম জিকির করতে পারেন, এতে আপনার সমস্যা কী? বিচারক আরও বলেন, আপনার মামলার কারণে তাহেরী আরও উড়বে। আপনি কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেছেন, সেখানে পুলিশ ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের কোনো প্রমাণ পায়নি, বিধায় মামলা নেয়নি।’

এরপর বিচারক বাদীর কাছ থেকে পেনড্রাইভ (পেনড্রাইভে ওয়াজের ভিডিও) রেখে দিয়ে মামলা আমলে নেবেন কিনা, সে বিষয়ে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত দাওয়াতে ইমানি বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুফতি মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জিকিরের সময় নেচেগেয়ে ‘বসেন বসেন, বইসা যান’ বলায় সমালোচিত হন তাহেরী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে তৈরি হয় নানা ট্রল ও ভিডিও। এর পর কিছু দিন ওয়াজ বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি ফের আলোচনায় আসেন এই বক্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেয়া মুফতি মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরী সুফিধারার আলেম হিসেবে পরিচিত।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.