Sylhet Today 24 PRINT

টাকা ফেরত নয়, কম খরচে কাজ করেছিলেন ঠিকাদার

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৩ অক্টোবর, ২০১৯

চট্টগ্রাম মহানগরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে কম টাকায় একটি সরকারি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছেন মো. আবু তৈয়ব নামের এক ঠিকাদার। আবু তৈয়ব চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয়ের চেয়ে ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা কম খরচে তিনি কাজটি সম্পন্ন করেন। এ টাকাগুলো তিনি সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার সময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রকল্পের টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই, কারণ ঠিকাদারকে বাড়তি টাকা দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকাদার সৎ থাকায় কাজটি কম খরচে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।

চট্টগ্রামের ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’ নামে একটি প্রকল্পে ডিপিপির নির্ধারিত ব্যয়ের চাইতে আবু তৈয়ব কম খরচে কাজটি সম্পন্ন করেন।

দুই একর জমিতে গড়ে ওঠা বায়েজিদ সবুজ উদ্যান প্রকল্পটিতে ৪১ প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরার মনিটরিংয়ে থাকা এই উদ্যানে দুটি ফটক দিয়ে প্রবেশ করবেন দর্শনার্থীরা। উদ্যানে রয়েছে বসার বেঞ্চ, হাঁটার পথ, শিশুদের রকমারি খেলনা ও আলোকসজ্জিত পানির ফোয়ারা। একক বসার বেঞ্চ আছে ৩৯টি, দ্বৈত ৭টি। ৬০ ফুট ব্যাসের জলাধারের দুই পাশে উন্মুক্ত গ্যালারি রাখা হয়েছে। জলাধারে পানি রাখা হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট। উদ্যানের সবুজ ঘাসে ও গাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর জন্য রয়েছে ৬০টি স্প্রিঙ্কলার। পুরো উদ্যানে রয়েছে ১০৮টি কম্পাউন্ড লাইট, ১৬টি গার্ডেন লাইট ও ৫৫টি ফাউন্টেন লাইট। পার্কে আসা লোকজনের জন্য নারী-পুরুষের রয়েছে আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা।

ঠিকাদার আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমি মানসস্মতভাবে কাজ করে পার্কটি তৈরি করেছি। আমার যত টাকা খরচ হয়েছে বা যত লাভ করা উচিত তা করে বাকি টাকা ফেরত দিয়েছি।’ তবে এজন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গণপূর্তের প্রকৌশলীরা বেশি প্রশংসার দাবিদার বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, "এখানে সব কৃতিত্ব প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পিডাব্লিউডি কর্মকর্তাদের। আমি মনে করি, সব ঠিকাদারদের মানুষের টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করা এবং সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা উচিৎ।"

আবু তৈয়ব বলেন, কারোরই ট্যাক্সদাতাদের অর্থ নষ্ট করা উচিৎ না।

এদিকে, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ঠিকাদারের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ঠিকাদার যেই পরিমাণ কাজ করেছেন, সেই পরিমাণ বিল আমরা তাকে প্রদান করেছি। তাকে বাড়তি টাকা প্রদান করা হয়নি। ঠিকাদার বাড়তি টাকা না পেলে ফেরত দেবেন কীভাবে? ডিপিপিতে প্রস্তাবিত যে খরচ ধরা হয়েছে, সেই পরিমাণ টাকা চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দও পাঠাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিপিপি তৈরির সময় প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে খরচ হয়েছে ৮ কোটি ২৩ টাকার মতো। কাজ শেষ করে ঠিকাদার এই পরিমাণই বিল দিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি বিল দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা তাকে এই পরিমাণ টাকাই দিয়েছি। ডিপিপিতে যে খরচ ধরা হয় বাস্তবে কাজ করার সময় সেই পরিমাণ টাকা খরচ হবে এমন কোনও কথা নেই। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কখনও ডিপিপির চেয়ে বেশি খরচ হয়। যখন কাঁচামালের দাম বেড়ে যায় তখন ব্যয় বেড়ে যায়। তখন ডিপিপি আবার সংশোধন করতে হয়। আবার যখন কাঁচামালের খরচ কম হয়, তখন ডিপিপি চেয়ে কম খরচ হয়। কম খরচ হলে তখন সমস্যা হয় না। কারণ তখন যত টাকা খরচ হয়, সেই পরিমাণ বিল করতে হয় ঠিকাদারকে। এখানে ঠিকাদারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করার কোনও সুযোগ নেই। এর জন্য কেউ প্রশংসার দাবিদারও না।’

২০১৭ সালে গণপূর্ত বিভাগ নগরীর বায়েজিদ এলাকায় সেনানিবাসের পাশে ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’ নামে একটি পার্ক গড়ে তোলার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই প্রকল্পের কাজ পায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়বের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ডিপিপিতে প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর গত মঙ্গলবার বায়েজিদ সবুজ উদ্যান পার্কটির উদ্বোধন করেন সাবেক গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।

এ বিষয়ে ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামে’র সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘ডিপিপির বরাদ্দের চেয়ে ঠিকাদার কম খরচ করেছেন এজন্য তিনি প্রশংসার দাবিদার। কাজের বিল ভাউচার দেওয়ার পর ঠিকাদাররা বিল পেয়ে থাকেন। আর বাড়তি বিল দিয়ে পরে সেটি ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদার চাইলে ডিপিপিতে নির্ধারিত অর্থ এই প্রকল্পে ব্যয় করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। এটি গণপূর্তের প্রকৌশলীদের তদারকির কারণে হতে পারে, আবার তিনি নিজেও সৎ ছিলেন বলে এটি হতে পারে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপিপির চেয়ে কম খরচ হয়েছে, এ রকম নজির আরও আছে। কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০০ কোটি টাকা কম খরচ করেছিল।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.