Sylhet Today 24 PRINT

১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাই উগ্রবাদে জড়িত হচ্ছে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৯ অক্টোবর, ২০১৯

১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণেরাই উগ্রবাদে জড়িত হচ্ছে, এমন মন্তব্য করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গিবাদে টেনে আনতে ইন্টারনেটে আকর্ষণীয় প্যাকেজ ছাড়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, এখন যারা (জঙ্গি) গ্রেপ্তার হচ্ছে, তারা কেউ কেউ আগে থেকেই জড়িত ছিল, আবার কেউ কেউ নতুন করে র‌্যাডিকালাইজড হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে।

শনিবার ‘ঢাকা পিস টক’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মনিরুল ইসলাম।

সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিবাদের যারা রিক্রুটার (সংগ্রহকারী), মোটিভেটর (উদ্বুদ্ধকারী), তারা ইন্টারনেটে লুক্রেটিভ (লোভনীয়) ও অ্যাট্রাক্টিভ (আকর্ষণীয়) প্যাকেজ দিচ্ছে। যারা মানসিকভাবে দুর্বল ও যাদের দেশপ্রেম নেই, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ নেই, মতাদর্শিক জায়গায় ধারণা নেই, টলারেন্স (সহনশীলতা) নেই, জীবনের বাস্তবতা যারা মেনে নিতে না পেরে শর্টকাট পথ খুঁজছে, তারাই র‌্যাডিকালাইজড (উগ্রবাদে) হচ্ছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হোলি আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিবাদবিরোধী কাজ বেশি হচ্ছে, যা আগে খুব একটা ছিল না। আমাদের এটা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের একটি জঙ্গিবাদবিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ করতে হবে।’

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সহিংস উগ্রবাদ বা এর ঘনীভূত রূপ সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিল কাজ। কোনো সুনির্দিষ্ট বাহিনী, সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষে তা সম্ভব না। যদি মতাদর্শিক সহিংসতা মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে এর প্রকৃতি বুঝতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে এর চালকগুলোকে। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কিছু হবে না। যদি কোনো পরিকল্পনা তৈরি করা হয়, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে ভুক্তভোগীদেরও তাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ‘ঢাকা পিস টক’ সে রকমরই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন অ্যাপ্রোচ তৈরির উদ্যোগ। ইউএসএআইডের ‘অবিরোধ: রোড টু টলারেন্স প্রোগ্রামের’ সহায়তায় এটি বাস্তবায়ন করবে অলাভজনক প্রাতিষ্ঠানিক সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিসার্ফ)। এর সার্বিক সহায়ক হবে সিটিটিসি।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সিসার্ফের নির্বাহী পরিচালক শবনম আজিম বলেন, সহিংস উগ্রবাদ বা এর ঘনীভূত রূপ সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিল কাজ কোনো সুনির্দিষ্ট বাহিনী, সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব না। এ জন্য সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

শবনম আজিম বলেন, তরুণেরাই বেশি সহিংস উগ্রবাদে ঝুঁকে। আর ক্ষতি পুরো জাতির। কোনো শিক্ষার্থী যাতে উগ্রবাদে না জড়ায়, সে জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দরকার পরিবারভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা। এরপর সামাজিক পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উগ্রবাদ ও মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিসার্ফ সচেতনতামূলক কাজটিই করতে চায়। যে কাজগুলো মানুষকে জঙ্গিবাদে নিয়ে যায়, সিসার্ফ ‘ঢাকা পিস টক’–এর মাধ্যমে সেগুলো শনাক্ত করবে ও সমাধানের পথ দেখাবে।

শবনম আজিম বলেন, ‘শুধু যে ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে সহিংস উগ্রবাদের ঘটনা ঘটছে, তা কিন্তু নয়। নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মূল্যবোধ এ রকম নানান বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। কী কারণে আমাদের তরুণেরা সহিংস উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণাই আমাদের লক্ষ্য।’

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দক্ষ সাংবাদিকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিসার্ফ কৌশলগত চিন্তক, একাডেমিকদের প্ল্যাটফর্ম। ঢাকায় সিসর্ফ ১২টি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করবে। একই সঙ্গে ১২টি আলাদা আলাদা গবেষণা হবে। প্রথমে সমাজের ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের একটি প্যানেল তৈরি করা হবে। মতাদর্শিক সহিংসতা প্রতিরোধে পরিবার ও উন্নত অভিভাবকত্ব, শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যসূচি পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ, তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে উগ্রবাদ প্রতিরোধে জাতীয় নীতি প্রণয়ন, উগ্রবাদ প্রতিরোধে নারীর ভূমিকা, উগ্রবাদে জড়িত ব্যক্তিদের সামাজিক পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনারে আলোচনা হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.