Sylhet Today 24 PRINT

ফ্লাইট এসেছে, পেঁয়াজ আসেনি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ নভেম্বর, ২০১৯

পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বিমানে করে পেঁয়াজ নিয়ে এসে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে বিমানে করে পেঁয়াজের প্রথম চালান আসার কথা থাকলেও ওইদিন রাতে ফ্লাইট আসলেও সে ফ্লাইটে পেঁয়াজ ছিল না।

জানা যায়, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট (এসভি ৩৮০২) মিসরের কায়রো থেকে জেদ্দা হয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছছে ২০ নভেম্বর রাতে (মঙ্গলবার দিবাগত রাত)। যাত্রীবাহী এ ফ্লাইটে পেঁয়াজ আসার কথা জানিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছলেও সেই ফ্লাইটে কোনও পেঁয়াজ ছিল না।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স অফিস জানিয়েছে, এসভি ৩৮০২ ফ্লাইটটি রাত ১২টার দিকে ঢাকায় অবতরণ করেছে। তবে সেই ফ্লাইটে কোনও পেঁয়াজ আসেনি। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি কার্গো ফ্লাইট আসবে। সেই ফ্লাইটে হয়তো পেঁয়াজ আসতে পারে।

এদিকে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি টিম ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত আছে। আমদানিকারকরা যেকোনো সময় ছাড়পত্রের আবেদন করলে অধিদপ্তর তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক রতন কুমার সরকার।

এছাড়াও বিমানবন্দরের হ্যান্ডলিং এজেন্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাতে পেঁয়াজ আসার খবরে জনবল প্রস্তুত রেখেছে। পেঁয়াজ দ্রুত খালাস করতে ঢাকা কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এখনও কেউ পেঁয়াজের চালান খালাস করার আবেদন জানায়নি। তবে ২৪ ঘণ্টা আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। পেঁয়াজ বিমানবন্দরে পৌঁছলে দ্রুত শুল্ক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সহায়তা করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে আকাশ ও সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। আকাশপথে আমদানি করা হচ্ছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ। মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে ঢাকার পথে রয়েছে। পেঁয়াজবাহী সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৩৮০২ ফ্লাইটে মিসরের কায়রো থেকে জেদ্দা হয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে ২০ নভেম্বর গভীর রাতে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন প্যাসেঞ্জার ও কার্গো ফ্লাইটে পেঁয়াজ অব্যাহতভাবে ঢাকায় আসবে। এসব পেঁয়াজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হবে। টিসিবির ট্রাক সেল ও নিয়োজিত ডিলারের মাধ্যমে সারাদেশে এ পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। এছাড়া সমুদ্রপথে ১২ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে। দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে। পেঁয়াজের মূল্যও দ্রুতগতিতে কমছে।’

এরআগে, গত ১৭ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জরুরিভিত্তিতে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারিভাবে টিসিবি তুরস্ক এবং বেসরকারি খাতের এস আলম গ্রুপ মিশর থেকে পেঁয়াজ আনবে। বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন ১৫ নভেম্বর জানিয়েছেন, যতদিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হবে, ততদিন এয়ার কার্গোতে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিশর থেকে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরিভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজ যোগে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সমুদ্র পথে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে, পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় এই চালান খুব শিগগিরই বাংলাদেশে পৌঁছাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে বলেন, সমস্যা যাতে না থাকে সেজন্য কার্গো ভাড়া করে আমরা পেঁয়াজ আনা শুরু করেছি। আগামীকাল পরশুর মধ্যেই এই বিমানে পেঁয়াজ এসে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, কাজেই আর চিন্তা নাই। সে ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।

এস আলম গ্রুপ বেসরকারি পর্যায়ে পেঁয়াজ আমদানি করছে। ১৯ নভেম্বর পেঁয়াজ না আসায় ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্সের কার্গো বিমান (বিএইচএ ৫৪১৯) পেঁয়াজ নিয়ে কায়রো থেকে সরাসরি ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। এর পরের দিন ২২ নভেম্বর শুক্রবার রাত ১টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্গো বিমান মিসরের কায়রো থেকে পেঁয়াজ নিয়ে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে জানা গেছে।

দেশে দৈনিক প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর আট থেকে দশ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। বেশির ভাগই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে এবং মিয়ানমার পেঁয়াজের মূল্য কয়েকগুণ বাড়ালে বিকল্প হিসেবে মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে সরকার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.