Sylhet Today 24 PRINT

বদলে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৬ জানুয়ারী, ২০২০

প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই পরিমার্জনের কারণে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসছে। এর আগে ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছিল।

শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান না কি অন্য শাখায় পড়বে, সেটা ঠিক হবে একাদশ শ্রেণিতে। এর আগে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। বইয়ের সংখ্যাও এখনকার চেয়ে কমবে। বিষয়বস্তু বদলাবে। আর এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে, যার ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। এমন প্রস্তাব ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আগামী বছর নতুন পাঠ্যবই পাবে।

পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে নতুন বই দেওয়া হবে। আগামী মার্চের মধ্যে শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালে গিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পুরোপুরি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে।

এনসিটিবির দুজন সদস্য বলেন, কিছু বিষয় প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। আর কিছু পরিকল্পনার মধ্যে আছে। শিক্ষাবিদ ও এনসিটিবির কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন হচ্ছে।

ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত ১০ বই
প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বই পড়ানো হবে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয় এবং নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা—এসব শাখায় ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০টি বই পড়ানো হবে, সেগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে এসব শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়।

এনসিটিবির একজন সদস্য বলেন, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে একেকটি বিষয়ে কি কি শেখানো হবে, তাও বলে দেওয়া হচ্ছে। যেমন বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের পরিবর্তে নতুন শিক্ষাক্রমে সামাজিক বিজ্ঞান বইটি যুগোপযোগী করে দেওয়া হচ্ছে। এতে সমাজ ও বিশ্বনাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো শেখানো হবে।

বই কমানোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলেছেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম। তবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে বাংলা ভাষাসহ অন্য বিষয়গুলো ভালোভাবে শিখতে পারে, সেই ব্যবস্থা রেখে বইগুলো প্রণয়ন করতে হবে।

দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে এসএসসি পরীক্ষা
বর্তমানে দুই বছর মেয়াদি নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির (সিলেবাস) ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয়। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এনসিটিবির একজন সদস্য বলেন, নবম শ্রেণিতে যেসব দক্ষতা শেখানোর কথা, তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই মূল্যায়ন করা হয়। নবম শ্রেণি পাস করে দশম শ্রেণিতে ওঠে। তাই কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপও কমবে। এটি অনুমোদন হলে ২০২৪ সালে গিয়ে বাস্তবায়ন হবে।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়িয়ে একাদশে গিয়ে শাখা ভাগ করার উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করেন শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, দেশ যত উন্নত হবে, শিক্ষার ভিতটা তত শক্ত করতে হবে। এ জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে সব বিষয়ে মোটামুটি দক্ষ করে গড়ে তোলা দরকার। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে কতটুকু পড়ানো হবে, সেগুলো সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

উচ্চমাধ্যমিকে দুই পাবলিক পরীক্ষা
পরিকল্পনা পাস হলে ২০২৫ সাল থেকে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে একজন কোন শাখায় (বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা) পড়বে, তা ঠিক হবে। তখন উচ্চমাধ্যমিকে ছয়টি বিষয়ে ১২টি পত্র থাকবে। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি—এই তিনটি বিষয় সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে। এর সঙ্গে একজন শিক্ষার্থী তার পছন্দের শাখার তিনটি বিষয় নেবে, যার প্রতিটির জন্য তিনটি পত্র থাকবে। যেমন বিজ্ঞানের তিনটি বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের প্রতিটির জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়পত্র থাকবে। বাধ্যতামূলক ওই তিনটি পত্র এবং শাখার প্রতিটি বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষা হবে একাদশ শ্রেণিতে। এই পরীক্ষা হবে শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এই পরীক্ষার নম্বর বোর্ডে সংরক্ষিত থাকবে। এরপর দ্বাদশ শ্রেণিতে সংশ্লিষ্ট শাখার প্রতিটি বিষয়ের বাকি দুটি করে মোট ছয়টি পত্রের পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষার নম্বর ও একাদশ শ্রেণিতে সংরক্ষিত নম্বর মিলিয়ে চূড়ান্ত হবে একজন শিক্ষার্থীর উচ্চমাধ্যমিকের ফল।

শাখার বিষয় নির্বাচনে কিছু নমনীয়তা দেখানোর চিন্তাও আছে। এটি হলে একজন শিক্ষার্থী চাইলে তার মূল শাখার দুটি বিষয়ের সঙ্গে অন্য শাখার আরেকটি বিষয় নিতে পারবে।

এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুটি পরীক্ষা হলেও কার্যত পরীক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমবে। এখন উচ্চমাধ্যমিকে যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা একসঙ্গে হয়, সেটাই একাদশ ও দ্বাদশে ভাগ করে নেওয়া হবে।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত হবে। তখন বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হবে।

প্রাথমিক স্তর
এনসিটিবির সূত্রমতে, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে সক্রিয় শিখনের (একটিভ লার্নিং) মাধ্যমে নির্ধারিত দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারে, সেই বিষয় মাথায় রেখে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন হচ্ছে।

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। এই চিন্তা থেকে হাতে-কলমে শেখানো যায় এমনভাবেই বইগুলো হবে। প্রাথমিক স্তরে বইয়ের নামেও পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে। যেমন গণিত বইয়ের নাম হতে পারে ‘গণিতের মজা’।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান বলেন, যারা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাটা বোঝেন, তাদের দিয়ে যুগের উপযুক্ত শিক্ষাক্রম তৈরি করতে হবে।

সূত্র: প্রথম আলো

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.