Sylhet Today 24 PRINT

আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস, প্রতিরোধে করণীয়

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সারা বিশ্বের মতো আজ ৪ ফেব্রুয়ারি দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস-২০২০। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আই এ্যাম অ্যান্ড আই উইল’ অর্থাৎ ‘আমি আছি, আমি থাকবো, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার’র (আইএআরসি) এক পরিসংখ্যানের হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরমধ্যে ১ লাখ ৮ হাজারই মারা যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয়ভাবে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও সঠিক কর্ম-পরিকল্পনার অভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন আক্রান্ত রোগীরা। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের জন্য জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল, কর্ম-পরিকল্পনা ও জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন চালু করা জরুরি।

তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। ক্যান্সারকে জয় করছেন অনেক মানুষ। ক্যান্সার হলে একজন মানুষ এমনিতেই ভেঙে পড়ে। কারণ একে তো ব্যয়বহুল চিকিৎসা তার ওপরে প্রাণনাশের ভয়। ক্যান্সার আক্রান্ত হলেই একজন মানুষ এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

যেসব কারণে বাড়ে ক্যান্সার ঝুঁকি
সারাবিশ্বে যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তার শতকরা ১২ ভাগ ক্যান্সারের কারণে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ক্যান্সারকে যথাক্রমে মৃত্যুর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্যান্সার হলে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চারপাশের টিস্যু, এমনকি দূরবর্তী কোনো অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরিণতিতে আক্রান্ত ব্যক্তি একপর্যায়ে মৃত্যুবরণ করে।

২০১৭ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। আর প্রতিদিন নতুন করে ৩৩৪ জন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর ব্যয়বহুল চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয় ৭০ ভাগ মানুষ। অথচ মাত্র চারটি বিষয়ে সচেতন হলেই ক্যান্সার থেকে অনেকটাই দূরে থাকা সম্ভব বলে মনে করেন পুষ্টিবিজ্ঞানী তামান্না চৌধুরী।

তিনি বলেন, চার কারণে মানুষের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রথমত, বংশগত কারণে অনেকের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। দ্বিতীয়ত, জীবনযাত্রায় অনিয়মের কারণেও ক্যান্সার হতে পারে। কেউ যদি সময়মতো না খায়, পরিমাণমতো না ঘুমায় তাতে তার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আর এই ওজন বাড়ার ফলে ক্যান্সার  হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তৃতীয়ত, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন ধরুণ যেসব খাবারে নানা ধরনের রং বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, ফরমালিন ব্যবহার করা হয় এমন খাবারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। খাবার ঠিকমতো সংরক্ষণ না করা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। সোজা কথায় সচেতনতার অভাবে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়ে।

ধুমপান ক্যান্সারের অন্যতম কারণ
এছাড়া ধূমপান ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকান ক্যান্সার-বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ডেল ও রিচার্ড পেটোর মতে, মানবদেহে যত ধরনের ক্যান্সার হতে পারে তার ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রেই ধূমপান ও তামাকের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে।

তাই আর দেরি নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হিসেবে আজই ধূমপান ছাড়ুন। কোনো ধরনের তামাকের প্রতি আসক্তি থাকলে আজই বেরিয়ে আসুন এ প্রাণঘাতী অভ্যাস থেকে। কারণ, ধূমপানের মাধ্যমে নিজের শরীরটাকেই শুধু যে বিষময় করে তুলছেন তা নয় বরং আপনার সিগারেটের ধোঁয়া আপনার প্রিয়জন ও পরিবারের সদস্যদের ক্যান্সার-ঝুঁকিও একই হারে বাড়াচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরোক্ষ ধূমপান সারা বিশ্বে প্রতিবছর অসংখ্য ক্যান্সারজনিত অকালমৃত্যুর কারণ।

ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়
আমাদের দেশে স্তন, জরায়ু, অন্ত্রনালি, প্রোস্টেট, ফুসফুস, পাকস্থলী, ডিম্বাশয়, যকৃত, অন্ননালি, মুখগহ্বর, ত্বক প্রভৃতি অঙ্গের ক্যান্সার প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। ক্যান্সারের কারণ হিসেবে পান-সুপারি, জর্দা, তামাকপাতা, ধূমপান, মদপান, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ, কিছু কিছু ভাইরাস (হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি, এবস্টেইন বার ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস), কিছু পরজীবী (সিস্টোসোমিয়াসিস), সূর্যকিরণ, তেজস্ট্ক্রিয়া, কীটনাশক, রঙিন খাবার, বায়ুদূষণ প্রভৃতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ইচ্ছে সবচেয়ে ভালো উপায়। সহজ কিছু জীবনাচার অনুসরণ করে ক্যান্সার-ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনি নিতে পারেন কিছু পদক্ষেপ।

এ বিষয়ে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, ওপরের কারণগুলো প্রতিহত করতে পারলে তিন ভাগের এক ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলুন। এসব নিয়মের মধ্যে সুপারি, জর্দা, তামাকপাতা, ধূমপান ও মদপান বর্জন করতে হবে। ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম করে শরীরকে সচল রাখা। সব ধরনের তেজস্ট্ক্রিয়া এড়িয়ে চলা। পেশাগত কারণে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কা থাকলে প্রয়োজনীয় প্রটেকশন নিয়ে কাজ করা। সময়মতো টিকা গ্রহণ করা (যেমন- 'হেপাটাইটিস বি' টিকা লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে)।

তিনি বলেন, রঙিন খাদ্য ও পানীয়, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ এবং ভেজাল বা নিম্নমানের কসমেটিক বর্জন করা। সর্বোপরি খাদ্য, ওষুধ ও কসমেটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা। পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ খাবার (শাকসবজি, ফলমূল) এবং আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। খাবারে অতিরিক্ত লবণ বর্জন করা। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা বা এড়িয়ে চলা। যেসব অসুখ থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেগুলোর দ্রুত চিকিৎসা করানো। ধূমপান ও মাদকবিরোধী আইন মেনে চলা অথবা বাস্তবায়ন করা। ক্যান্সারের কারণ, প্রতিরোধ, দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয় এবং ক্যান্সারের পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে এ ঘাতকব্যাধি মুক্ত করা সম্ভব। তাই ক্যান্সারের লক্ষণ জানতে পারলে শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নেবেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.