Sylhet Today 24 PRINT

মশা যেন ভোট খেয়ে না ফেলে: প্রধানমন্ত্রী

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টিকারী এডিস মশা নির্মূলে আগাম ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মশা আপনার ভোট যেন খেয়ে না ফেলে সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে দেখতে হবে। মশা ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী। এটা মাথায় রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু একটি সমস্যা আকারেই দেখা দিয়েছে। কাজেই এখন থেকেই নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শেখ হাসিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে হলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। যেকোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজন জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। কাজেই সেই আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেই স্ব-স্ব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন, সেটাই আমরা চাই।’ শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি সরকারও এটি পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেবে বলেও জানান।

এর অগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম একই স্থানে দুই সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত ১৭২ জন কাউন্সিলরকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নগরবাসী ভোটের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরের জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে ডিএসসিসির এবং আতিকুল ইসলামকে ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচিত দুই মেয়রের পাশাপাশি ডিএসসিসিতে ১০০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৭৫ জন সাধারণ এবং সংরক্ষিত আসন থেকে ২৫ জন মহিলা কাউন্সিলর এবং ডিএনসিসিতে ৭২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৫৪ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসন থেকে ১৮ জন মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তবে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ ডিএসসিসিতে ১৭ মে এবং ডিএনসিসিতে ১৩ মে শেষ হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং নবনির্বাচিত দুই মেয়র এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের উন্নয়নের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করি এবং এর জন্য বাজেট দিই। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেটা নিবিড়ভাবে আমরা পর্যবেক্ষণ করব।’ তিনি আরও বলেন,‘আপনারা যাঁরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, তাঁদের কাছে আমার এই অনুরোধটাই থাকবে, একটা কথা মনে রাখবেন, জনগণ আপনাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। জনগণের কাছে আপনারা অঙ্গীকারবদ্ধ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যে শপথ নিয়েছেন, সেই শপথের কথা মনে রেখে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা আপনাকে ভোট দিয়েছেন এবং যারা দেয় নাই অর্থাৎ এলাকাবাসী, সকলের সুযোগ-সুবিধা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।’ বহুদলীয় গণতন্ত্রে জনগণের ইচ্ছেমতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থাকায় জনগণ তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেও যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি সকলের জন্যই নির্বাচিত। এটা মনে রাখতে হবে এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। এটাই রাজনীতির নিয়ম বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, তাঁর সরকার অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কাজেই সেগুলোর যেন যথাযথ বাস্তবায়ন হয় সেদিকে আপনারা দৃষ্টি দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে তাঁর সরকারের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার তথ্য জানিয়ে এর সংক্রমণ রোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে মুক্ত রাখা যায়, সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটি হাসপাতাল আমরা আলাদাভাবে করে দিচ্ছি এবং সেখানে ডাক্তার, নার্সসহ যাঁরা সেবা দেবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, পোশাক ঠিক করা এবং তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও করছি।’ পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে যে নির্দেশনা যাচ্ছে, সেসব নির্দেশনাও তিনি সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানান।

এ সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা পুনরায় কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন,‘আমি চাই যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয়। কোনো রকম অনিয়ম না হয়।’ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘যদিও অনিয়ম-দুর্নীতি হয়, সে যে-ই হোক না কেন, আমি তাকে ছাড়ব না, কাউকে ছাড়া হবে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত এবং সেই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যেসব কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সম্পন্ন করতে চান। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘কেউ যদি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বা কোনো রকম দুর্নীতি করে বা নয়-ছয় করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। সমাজের এই ক্ষতগুলো থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। এর প্রভাবে আপনাদেরই সন্তান, ছেলে-পেলে বা বংশধরেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের একটানা দেশ পরিচালনায় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নে সার্বিক গতি এসেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিস্ময় এবং আমি বিদেশে গেলে বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের একটাই প্রশ্ন থাকে যে, এত দ্রুত উন্নয়নটা কী করে করলেন?’

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব চলতে থাকার সময় দেশের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করলেও এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে তাঁর সরকার পড়তে দেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আর আগের মতো কারও কাছে হাত পেতে চলতে হয় না। উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখায় ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে স্বীকৃতি পেয়েছি, তা বলবৎ থাকবে।’

২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই পরিকল্পিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি না থাকলেও দেশটা যাতে এগিয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থার অংশ হিসেবেই শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হলেও তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার আসবে, সরকার যাবে । কিন্তু ভবিষ্যতে যেন উন্নয়নের কাজগুলো আবার থমকে না যায়।’ আগের মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি সে সময়কার সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা এক ইউনিটও না বাড়িয়ে উল্টো ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট থেকে ৩ হাজার ২০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনার তথ্য উপস্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াট এবং শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, গ্রামে বসেই গ্রামের জনগণ যেন শহরের নাগরিক সুবিধা পেতে পারে, তা নিশ্চিতেই তাঁর সরকার তৃণমূল থেকে সব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মুজিব বর্ষ উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর ক্ষমতায় থাকার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ায় জনগণের প্রতি পুনরায় কৃতজ্ঞতা জানান।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.