Sylhet Today 24 PRINT

করোনা পরীক্ষার মেশিন আসতেই চিকিৎসকের অবসরের আবেদন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৫ এপ্রিল, ২০২০

নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণের বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়াচ্ছে সরকার। এমন অবস্থায় করোনা পরীক্ষার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবাচিম) ভাইরোলজি বিভাগে পিসিআর মেশিন সংযোজন করার পর পরই ওই ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম টি জাহাঙ্গীর হুসাইন স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আবেদন করেছেন।

তবে তার আবেদনটি গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ এবং তিনিও শেষ পর্যন্ত মত বদলেছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর পরই ভাইরোলজি বিভাগটিতে কার্যক্রম শুরু করতে তোড়জোড় শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর থেকে গত ৩০ এপ্রিল করোনাভাইরাস পরীক্ষার অত্যাধুনিক পিসিআর মেশিন সরবরাহ করা হয় শেবাচিমকে। তার আগেই মেশিন স্থাপনের জন্য কলেজের একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষ প্রস্তুতের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাতভর শ্রমিক দিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কক্ষটি সংস্কার কার্যক্রম চালানো হয়। সর্বশেষ শুক্রবার দিনভর কাজ করে কক্ষটিতে টাইলসের কাজ শেষ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরোলজি বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

পিসিআর মেশিন স্থাপনের পর দেশের সংকটময় এই মুহূর্তে বিভাগটির অর্থাৎ পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগকে। কিন্তু কভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এ বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যেও। আর সেই আতঙ্কের কারণেই স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম টি জাহাঙ্গীর হুসাইন।

পিসিআর মেশিনটি শেবাচিমে স্থাপনের কাজ শুরুর পরই তিনি চাকরি থেকে অবসরকালীন ছুটিতে (এলপিআর) যেতে লিখিত আবেদন করেন। তবে চলমান করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার স্বার্থে তার ওই আবেদনটি গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক ডা. এমটি জাহাঙ্গীর হুসাইন স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার আবেদন করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার চাকরির মেয়াদ আছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কারণে পরিবারের চাপের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন করেছি। তাছাড়া মাইক্রোবায়োলজি বিভাগেও জনবল নেই। আমি এবং অপর একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন।

তবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি অবসরে গেলে এই মুহূর্তে তিনিও ভয় পেতে পারেন বলেই পরে সিদ্ধান্ত পাল্টেছি। আর কর্তৃপক্ষও এই পরিস্থিতিতে আবেদনটি গ্রহণ করেননি।

তিনি বলেন, ভাইরোলজি বিভাগটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এখানে যারা কাজ করবে সবার আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে। কিন্তু সে ধরনের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থাই নেই। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞ জনবলের প্রয়োজন রয়েছে। নেই কোনো চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান। ভাইরোলজি বিভাগটি শুধু নামেই আছে।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে লোকবল সঙ্কটের বিষয়ে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হুসাইন বলেন, আমিসহ দু’জন শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন। ছয়জন টেকনিশিয়ানের বিপরীতে দু’জন মাত্র টেকনিশিয়ান রয়েছে। তাদের দিয়েও ভরসা করা যায় না।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তিন মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করে যে কোম্পানি মেশিনটি সরবরাহ করেছে তাদের মাধ্যমে সাত দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের এ প্রশিক্ষণ কতটুকু কাজে আসবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সামান্য ভুলেই বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ভাইরাস পরীক্ষাগারে নিরাপত্তার গুরুত্ব স্বীকার করে শেবাচিমের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অসীত ভূষণ দাস বলেন, গণপূর্ত বিভাগ সেই বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আমারাও চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব করোনাভাইরাস পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে। এজন্য ছুটির দিনেও গণপূর্ত বিভাগ অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে কাজ করেছে। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধানের স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার আবেদন করার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন দাবি করে অধ্যক্ষ বলেন, অবসরে যাওয়ার বিষয়টিতে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আর ডা. এম টি জাহাঙ্গীর হুসাইন এলপিআরের আবেদন করেছেন কিনা তাও আমার জানা নেই।

ভাইরোলজি বিভাগের জন্য চিকিৎসক এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান অধ্যক্ষ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.