Sylhet Today 24 PRINT

নারায়ণগঞ্জে হিন্দু ব্যবসায়ীর দাহ করলেন মুসলিম কাউন্সিলর

করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্য

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৭ এপ্রিল, ২০২০

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া নারায়নগঞ্জের এক হিন্দু ব্যবসায়ীর দাহ ও মুখাগ্নি করেছেন স্থানীয় এক ওয়ার্ড কান্ডন্সিলর। যিনি ধর্মে মুসলিম। রোববার ওই ব্যবসায়ী মারা যান।

জানা যায়, মারা যাওয়ার পর ওই ভবনের সিঁড়িতেই পড়েছিল তার মৃতদেহ ঘণ্টাখানেকেরও বেশী। করোনার উপসর্গ থাকায় পরিবারের সদস্যরা মরদেহের কাছে আসছিলেন না। পরে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার নেতৃত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবী ওই ব্যক্তির শেষকৃত্য করেন।

কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার জানান, নগরীর সাত তলা একটি ভবনের চতুর্থ তলায় স্ত্রী, কিশোরী দুই মেয়ে আর মাকে নিয়ে থাকতেন ওই ব্যবসায়ী। গত দুই-তিন দিন ধরে কাশি আর শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন ওই ব্যবসায়ী, এছাড়া আর অন্য কোন শারীরিক সমস্যা তার ছিল না।

বিজ্ঞাপন



তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের এসব উপসর্গ থাকার কারণে তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে উপায়ান্তর না দেখে ব্যবসায়ীর স্ত্রী আর তাই দুই মেয়ে মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

তবে খুব বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি তারা। চার তলা থেকে মাত্র কয়েকটি সিঁড়ি অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। এর পরপরই মারা যান তিনি, আর সেখানেই অনেক সময় পড়ে থাকে তার মরদেহ - জানাচ্ছিলেন মাকছুদুল আলম খন্দকার।

"এমনকি তার স্ত্রী আমাদেরকে বলে যে, মৃত্যুর আগে একটু পানি চেয়েছিল তারা। সেই পানি পর্যন্ত কেউ দিতে আসেনি।"

কাউন্সিলর জানান, মৃত ব্যক্তির ভাই ও শ্যালকের কাছ থেকে তিনি খবর পান। তিনি বলেন, তারা তাকে ফোন করে মৃতদেহ সৎকারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

নারায়ণগঞ্জের এই কাউন্সিলর করোনাভাইরাসে মৃত কিংবা কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বেশ অনেকের মরদেহ দাফন বা সৎকার করেছেন। তিনি যখন ফোনটি পান, তখন তিনি করোনাভাইরাসে মৃত আরেক ব্যক্তির দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছিলেন।

মাকছুদুল আলম খন্দকার বলেন, "আমরা গিয়ে দেখি যে সাড়ে তিন তলার সিঁড়িতে লম্বালম্বিভাবে লাশ পড়ে আছে।"

এর পর ওই ব্যক্তির ফ্লাটে গিয়ে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেন কাউন্সিলর। তখন তার স্ত্রী তাদেরকে ওই ব্যক্তির শেষকৃত্য করার অনুরোধ করেন।

বিজ্ঞাপন



"আমরা গিয়ে বলি যে আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন কেউ-ই তো আসতেছে না। আমরা তো মুসলিম। আমরা যদি সৎকার করি তাহলে কি কোন আপত্তি আছে?"

স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর লাশ সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে থাকা সরকারি পুরোহিতের সহায়তায় শেষকৃত্য করা হয়।

তিনি বলেন, "আমরা নিজেরাই ওই ব্যক্তির মুখাগ্নি করি। ওই ব্যবসায়ীর আপন শ্যালক শেষকৃত্য করার জন্য ফেসবুকে আমাকে অভিনন্দন জানায়।"


কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার জানান, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিংবা রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৩৪টি মরদেহ দাফন ও সৎকার করেছেন তিনি এবং তার সহযোগীরা।

এর মধ্যে ছয় জন হিন্দু ছিলেন। আর বাকিরা মুসলিম। এই ছয় জনের মধ্যে পরিবারের কোন সদস্য না আসায় অন্তত তিন জনের মুখাগ্নি করেছেন তিনি নিজেই।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.