Sylhet Today 24 PRINT

নাইকোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের জয়

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৩ মে, ২০২০

নাইকো দুর্নীতি মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তির প্লাটফর্ম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটেড (ইকসিড) এই রায় ঘোষণা করেছে। এতে নাইকোর কাছে বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পাবে। যদিও ইকসিড স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি নির্ণয় করে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলেছে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

রোববার (৩ মে) দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানান।

এই সময় প্রতিমন্ত্রী জানান, দীর্ঘ ১০ বছর আইনি প্রক্রিয়ার পর এই মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। রায় পক্ষে আসাতে সারা বিশ্বের কাছে বার্তা গেছে বাংলাদেশে গিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে না।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইকসিড এই রায় প্রদান করে। তবে মার্চের শুরুতে সংবাদ সম্মেলন করে এই রায় জানানোর কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান বলেন, কানাডিয়ান তেল গ্যাস কোম্পানি নাইকো ২০০৩ সালে বিএনপির সময়ে বাংলাদেশের ছাতক গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান উন্নয়নের কাজ পায়। একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে প্রান্তিক দেখিয়ে বিএনপি সরকার নাইকোকে কাজ দেয়। এতে রাষ্ট্রীয় বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। এই মামলাটি দেশের আদালতে চলমান রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় তা ২০১৮ সালে ইকসিডে জমা দেওয়া হয়েছে। ইকসিড রায়ে বলেছে নাইকোর গাফিলতি এবং অদক্ষতার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে এর দায় নাইকোকেই নিতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সেপ্টেম্বরে আবার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি পেছাবে।

বিজ্ঞাপন

মামলাটির আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি জানান, বাপেক্স এর ১১৮ মিলিয়ন ডলার এবং পেট্রোবাংলার ৮৯৬ মিলিয়ন ডলার মিলিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর বাইরে আদালত বলেছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এবং পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি নিরূপণ করে আদালতে জমা দিতে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

তিনি আরও জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে আরও একটি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন করোনার কারণে সেটি সম্ভব হবে না। ফলে আমাদের পরিস্থিতি ভাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ঠিক হওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন হতে পারে। এই জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আমরা তাদের দিয়ে পুনঃরায় মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দেবো। এদিকে নাইকো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন আমাদের ব্লক-৯ এ বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্রে নাইকোর সম্পত্তি দিয়ে তা উশুল করতে হবে।

এতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ কতো ক্ষতিপূরণ পেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে ৩০ মিলিয়ন ডলারের গ্যাসের বিল পাবে, এছাড়া ব্লক-৯ এ নাইকোর সম্পত্তি রয়েছে। এই সম্পত্তি তারা বছর কয়েক আগে ২৮০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে চেয়েছিল। ফলে বাংলাদেশ এক বিলিয়নের মধ্যে ৩১০ মিলিয়ন ডলারের মতো পেতে পারে।

এই সময় জ্বালানি সচিব বলেন, ‘আমাদেরকে এই অর্থ তাদের দিয়ে দিতে হতো। এখন আর দিতে হচ্ছে না। আবার এর ফলে সারা বিশ্বের কাছেই একটি সুন্দর বার্তা পৌঁছেছে। এটিও বিবেচনা করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, গ্যাসকূপ খনন করার সময় ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাতকে প্রথম দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আবার চেষ্টা করতে গেলে আরও এক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে খনিটিতে থাকা গ্যাসের অনেকটা পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য বিলুপ্ত হয়। এখনও ছাতকে এই গ্যাস ক্ষেত্রের আশেপাশের এলাকায় গ্যাস উদগীরণ ঘটছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.