Sylhet Today 24 PRINT

গণফোরামে ভাঙনের সুর

যুগভেরী ডেস্ক |  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

গৃহবিবাদ থেকে বিভক্তির পথে এগোচ্ছে ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম।

সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদ ও মোস্তফা মহসিন মন্টুর বিরোধের জেরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলটিতে এই ভাঙন হচ্ছে।

গত বছর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দুই অংশের বিবাদ চলে আসছিল। তা নিয়ে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে।

এর ধারাবাহিকতায় আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দলের নামে বর্ধিত সভা ডেকেছেন গত কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন মন্টু।

তাদের ডাকা এই সভাকে ‘অগঠনতান্ত্রিক’ বলছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া।

কামাল হোসেন ও রেজা কিবরিয়ার স্বাক্ষরে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এ্ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

অন্যদিকে সুব্রত চৌধুরীরা বলনছেন, বর্ধিত সভায় দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কামাল হোসেনকে আমন্ত্রণ জানাবেন তারা।

কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ১৯৯৩ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে বেরিয়ে আসা সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিককে সঙ্গে নিয়ে গণফোরাম গঠন করেন।

কয়েক বছর আগে মানিক মারা গেলে আওয়ামী যুবলীগ থেকে আসা মন্টুকে দল সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলটি একাদশ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে অংশ নিয়ে প্রথম সংসদে যায়। দলের প্রতীক ‘উদীয়মান সূয’ নিয়ে সিলেট-২ আসনে বিজয়ী হন মোকাব্বির খান।

নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল নির্বাচনের পর থেকে বিবাদ চলছে দলটিতে।

রেজা কিবরিয়া বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওরা এরকম বর্ধিত সভা আহ্বান করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ।”

বিজ্ঞাপন



তিনি বলেন, “কথিত ওই সভায় গণফোরামের কোনো জেলা কমিটির নেতারা আসবেন না। আমার সাথে প্রত্যেকটা জেলা কমিটির নেতাদের কথা হয়েছে। গাজীপুর আর এলিফেন্ট রোড থেকে কিছু লোকজন নিয়ে এই সভা হবে।”

পাল্টা অভিযোগ এনে সুব্রত চৌধুরী বলেন, “উনি (সাধারণ সম্পাদক) নিজেই তো গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনা করছেন না। গঠনতন্ত্রের আছে ৩০ দিনে সম্পাদক পরিষদ, ৬০ দিনে স্থায়ী কমিটি এবং ৯০ দিনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করতে হবে।

“২০১৯ সালে ৫ মে মাসে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার এক বছরের মধ্যে একটি মিটিংও উনি করেনি। এসব মিটিং আহবান করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির ৭০ জন সদস্য লিখিতভাবে চিঠি দিয়েছে। উল্টো তাদের মধ্যে ১৩ জনকে শোকজ নোটিস এবং চারজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এভাবে তো দল চলতে পারে না। এটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।”

রেজা কিবরিয়া বলেন, “ওরা কোনো গঠনতন্ত্র মানতে চায় না। এভাবে তো দল বলুন কিংবা সংগঠন বলুন, রান করতে পারে না।”

তিনি দাবি করেন, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করেন তিনি। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তাতে ছেদ ঘটে।

“চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেটসহ বেশ কিছু জেলায় আমি গিয়ে কমিটিগুলোকে সক্রিয় করার কাজ করেছি। আমাদের প্রায় ৩৫টা জেলায় সক্রিয় সাংগঠনিক কাজ আছে, আরো জেলায় আমরা কাজ করছিলাম।এরমধ্যে কোভিড-১৯ প্রকোপের কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত হয়ে যায়।” রেজা কিবরিয়া স্বেচ্ছাচারীভাবে দল চালাচ্ছেন বলে সুব্রত চৌধুরীদের অভিযোগ।

তারা বলছেন, রোববারের বর্ধিত সভায় রেজা কিবরিয়া ছাড়া সভাপতি কামাল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সারা দেশের জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিনিধিদের আসতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কামাল হোসেন না এলে কী করবেন- প্রশ্নে সুব্রত চৌধুরী বলেন, “তিনি না এলে উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মকৌশল ঠিক করা হবে।”

“আমরা রাজনীতি করতে চাই, রাজনীতির স্বাভাবিক চর্চার অধিকার চাই। গণফোরাম গঠনটাই হয়েছিলো এথানে সব কিছু স্বচ্ছতার আলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা হবে। সেজন্য এই দলের সভাপতির একচ্ছত্র ক্ষমতা নেই, যা অন্যান্য দলে আছে,” বলেন তিনি।

সুব্রত চৌধুরীদের আলাদা চলার বিষয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, “যে কারও রাজনীতি করার অধিকার আছে। তারা কোনো দল গঠন করে করতে পারেন। কিন্তু গণফোরামের নাম ব্যবহার করে কোনো সভা করার অধিকার কারও নেই।”

গত বছরের কাউন্সিলের পরে ঘোষিত কমিটিতে মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে গণফোরামে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দাঁড়ায় দুই গ্রুপ। রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলে অন্য পক্ষের নেতারা।

এক পর্যায়ে রেজা কিবরিয়া চারজনকে বহিষ্কার করেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হাসিব চৌধুরী, খান সিদ্দিকুর রহমান, হেলাল উদ্দিন ও লতিফুল বারী হামিম।

সুব্রত চৌধুরীরাও পাল্টা বহিষ্কার করেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির মহসীন রশিদ, আ ও ম শফিকউল্লাহ ও মোশতাক আহমেদকে।

পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে গত ৪ মার্চ গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে আহ্বায়ক হয়ে সাধারণ সম্পাদক করেন রেজা কিবরিয়াকে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.