Sylhet Today 24 PRINT

শিবির ক্যাডার, শহীদ মিনার ভাংচুরকারী, ছিনতাইকারী- সবাই মিলে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নব গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অর্থ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন হোজায়েল আহমদ বাপ্পী। গত জোট সরকারের আমলে তিনি সিলেট মদন মোহন কলেজের ছাত্র ছিলেন। সেসময় তিনি কলেজ ছাত্র শিবিরের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিরোধীরা সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন।

বাপ্পী ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভাংচুরে অংশ নেন বলে জানা গেছে। শহীদ মিনার ভাংচুর মামলায় তিনি জেলও খাটেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো চারটি মামলা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনকারীদের একজন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হোসাইন আহমদ চৌধুরী বলেন, বাপ্পী শিবিরের ক্যাডার ছিলো। তার বাবাও জামায়েতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

মদন মোহন কলেজের ছাত্র ও মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাপ্পী মদন মোহন কলেজ শিবিরের সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। শহীদ মিনার ভাংচুর মামলারও তিনি আসামী।

অনিক বলেন, বাপ্পী আমার প্রতিবেশীও। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পূর্ব পর্যন্ত তিনি শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর কিছুদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। এখন ছাত্রলীগে ঢুকেছেন। থানায় তার বিরুদ্ধে ৪ টি মামলা আছে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আহমদ সামাদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাপ্পীর বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ পেলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।

কেবল হোজায়েল আহমদ বাপ্পী নয়, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নব গঠিত কমিটিতে বিভিন্ন পদ পাওয়া অন্তত ২৪ নেতার বিরুদ্ধে এরকম নানা অভিযোগ ওঠেছে। কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া এসব নেতাদের বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্ততা, ছাত্রদল ফেরত, বিভিন্ন মামলার আসামী, চাঁদাবাজি, অছাত্র, ব্যবসায়ী, বিবাহিত- এমন অভিযোগ ওঠেছে।

এদিকে, গত ৪ ডিসেম্বর জেলা ছাত্রলীগের ১৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরই এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে জেলাজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে ছাত্রলীগের একাংশ। বৃহস্পতিবার নগরীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে তারা। মতবিনিময়কালে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম. নিজাম উদ্দিন। এসময় জেলা কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া ২৪ জন নেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন নিজাম।

নিজাম উদ্দিদন জানান, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাক্কুর আহমদ জনি হত্যা মামলার আসামী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের খান সাবেক ছাত্রদল নেতাও জেলা টমটম শ্রমিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। সহ-সভাপতি সুলেমান হোসেন চৌধুরী অছাত্র, বিবাহিত ও এক পুত্র সন্তানের জনক।

বৃহস্পতিবার মতবিনিময় সভায় বিদ্রোহীদের নেতারা আরো অভিযোগ করেন- জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি মো. ছয়েফ আহমদ ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশকারী ও একাধিক মামলার আসামী, সমাজসেবা সম্পাদক জাকারিয়া মাহমুদ রহমান চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দপ্তর সম্পাদক আদিরাজ উজ্জ্বল ইভটিজিংয়ের দায়ে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত, সহ সম্পাদক মারুফুল হাসান মারুপ বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক, সহ সম্পাদক সৌরভ আহমদ তালুকদার সাবেক ছাত্রদল নেতা, সহ-সভাপতি সাইফুর রহমান ফার্মেসী ব্যবসায়ী, প্রচার সম্পাদক নিলয় কিশোর ধর জয় চিহ্নিত অপরাধী, সহ-সভাপতি সাহেদ আহমদ অছাত্র ও দর্জি ব্যবসায়ী, সহ-সম্পাদক মো. হাবিব আহমদ সাবেক ছাত্রদল নেতা, উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক আব্দুল রাহী রিফাত ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশকারী, উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মো. তানভির হোসেন বিবাহিত, উপ পাঠাগার সম্পাদক মুহিবুর রহমান মুহিব ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশকারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ সানী ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশকারী, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এ.কে.এম চৌধুরী জাবেদ অছাত্র ও ব্যবসায়ী, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরান হোসেন খান ট্রাভেলস ব্যবসায়ী, সহ সভাপতি সোহেল আহমদ মুননা আদম ব্যবসায়ী, সহ সভাপতি অনিরুদ্ধ মজুমদার পলাশ নারী নির্যাতন মামলায় কারাভোগকারী,সহ সভাপতি ইমরান চৌধুরী করিমউল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও অছাত্র।

এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আলী হোসেন এবং সহ-সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয় মতবিনিময়কালে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে অভিযোগগুলো অস্বীকার না করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহারিয়ার আহমদ সামাদ বলেন, অভিযোগ করলেই সব সত্য হয়ে যায় না। আমার বিরুদ্ধেও অনেকে অভিযোগ করে, আমি নাকি শিবির করতাম। অথচ আমি ওয়ার্ড পর্যায় থেকে ছাত্রলীগ করে এসেছি।

তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করছেন তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দেখাতে পারলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমিটিতে ঠাঁই প্রাপ্ত অনেকের বিরুদ্ধে মামলা থাকার প্রমাণ রয়েছে জানালে সামাদ বলেন, মামলা তো একজনের বিরুদ্ধে নানা কারণেই হতে পারে। পারিবারিক কারণেও হয়। কিন্তু আদালতে দোষি প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তো কাউকে অপরাধী বলা যায় না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.