Sylhet Today 24 PRINT

গৌরবের ৬৮ বছর

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৪ জানুয়ারী, ২০১৬

১৯৪৭ সাল। দেশ ভাগের বেদনা তখনও আকাশে-বাতাসে। ওই বছর কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ক্ষত তখনও দগদগ করছে মানুষের মনে। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া ভারত-পাকিস্তানের রাজনীতি তখন বিশেষ দিকে মোড় নিয়েছে। রাজনীতির এমন উষা লগ্নেই কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন বাঙালির মুক্তির দূত শেখ মুজিবুর রহমান। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরেই ছাত্রদের মনে আশার আলো জাগিয়ে তোলেন তরুণ নেতা শেখ মুজিব।

আর স্বাধিকার আন্দোলনের দীপ্ত চেতনা নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা দেন ছাত্রলীগ। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠন বাঙালির মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে থাকে। গত ৬৮ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতা অর্জন, গণতন্ত্র ও প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের। শুরু থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। চরম আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বিজয় নিশানা উড়িয়েছে স্বনামধন্য ছাত্রলীগ।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’র আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতৃত্বে দেয়। ভাষার অধিকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা পায়। ৫৪’র সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ৬৬’র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসককে পদত্যাগে বাধ্য এবং বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০’র নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ ছিল ঈর্ষনীয়।

স্বাধীনতার পরেও সংগ্রাম-আন্দেলনে ছাত্রলীগ তার স্বমহিমায় ভূমিকা রাখতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ছাত্রলীগবিরোধী অবস্থানে এর সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে।

তবে আরেক সামরিক শাসক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। ছাত্রলীগের গড়ে তোলা দুর্বার আন্দেলনের কারণে স্বৈরাচার এরশাদের পতন তরাণ্বিত হয়। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ছাত্রলীগ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে ১/১১-এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধেও। ওই সময় সামরিক চাদরে ঢাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

রাজনীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ছাত্রলীগ গোটা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট সরকারের বিজয়েও ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। খুন-খারাবি, হল দখল, সাংগঠনিক কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষক লাঞ্ছনা, যৌন হয়রানিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় তীব্র সমালোচনায় পড়তে হয় ছাত্রলীগকে।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধীজোটের হরতাল চলাকালে বিশ্বজিৎ নামের এক দর্জি দোকানিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে নিন্দা আর ধিক্কার পায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এহীন কর্মকাণ্ড দেখে সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.