Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ৫ বছরে ৪ কর্মী খুন, বিচার হয়নি একটিরও

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২২ জানুয়ারী, ২০১৬

গত ৫ বছরে সিলেটে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন সংগঠনটির ৪ কর্মী। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। বারবার নিজেদের মধ্যে সহিংসতায় জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। ঘটেছে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া।

ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ সংঘাতে দলের ৪ কর্মীর প্রাণহানির ও অনেকের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি একটিরও। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও মামলায় নেই কোনো অগ্রগতি। হত্যা মামলার আসামীরাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচার, দোষিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা কেবল আশ্বাসেই আটকে আছে। ফলে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে নিহতের পরিবার।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিব। যদিও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন এই হত্যাকাণ্ডকে 'ব্যক্তিগত বিরোধ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এরআগে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বলি হন ছাত্রলীগ নেতা উদয়েন্দু সিংহ পলাশ, সুমন চন্দ্র দাস ও আব্দুল আলী।

উদয়েন্দু সিংহ পলাশ: ২০১০ সালের ১২ জুলাই অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে নগরীর টিলাগড়ে খুন হন এমসি কলেজের গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী উদয়েন্দু সিংহ পলাশ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন পলাশের বাবা বীরেশ্বর সিংহ।

প্রায় এক বছর আগে মূল অভিযুক্তদের কয়েকজনকে বাদ দিয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত পলাশের সহপাঠী ও সহকর্মীরা।

সুমন চন্দ্র দাস: ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের পার্থ-সবুজ গ্রুপের সাথে অঞ্জন-উত্তম গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী সুমন চন্দ্র দাস।

এ ঘটনায় সুমনের মা প্রতিমা দাস বাদী হয়ে ছাত্রলীগের অজ্ঞাতনামা শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গত ৯ মাসে ৬ জনকে গ্রেফতার করা ছাড়া মামলার আর কোন অগ্রগতি নেই বলে জানান জালালাবাদ থানার ওসি আকতার হোসেন।

আব্দুল আলী : ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় সিলেট মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজ দলের ক্যাডারদের ছুরিকাঘাতে খুন হন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার সিলাম তেলিপাড়া গ্রামের আকলিস মিয়া আরকানের ছেলে আব্দুল আলী (১৯)। তিনি ছাত্রলীগ বিধান সাহা গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

ঘটনার দিন বিকেলে দক্ষিণ সুরমা থানার চন্ডিপুলস্থ ফুলকলি মিষ্টিঘর থেকে আটক করা হয় মূল ঘাতক সিলেটের ওসমানীনগর থানার দয়ামীর গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাশের ছেলে প্রণজিৎ দাশ ও সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুনুর রশিদের ছেলে আঙ্গুর মিয়া।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৫ আগস্ট প্রণজিত দাশ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। কিন্তু স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য ঘাতক আঙ্গুরকে তিন দফায় আদালতে হাজির করা হলেও সে কোন স্বীকারোক্তি প্রদান করেনি। বর্তমানে আঙ্গুর ও প্রণজিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে।

কাজী হাবিবুর রহমান : ছাত্রলীগের গ্রুপিং সর্বশেষ বলি হয় হাবিবুর রহমান। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটায় নগরীর শামীমাবাদে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠে ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন মুহাম্মদ সাগর ও সোহেলের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগকর্মী তার উপর হামলা চালায়। এসময় হাবিবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তারা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় হাবিব।

সহপাঠীরা জানান, হাবিব সম্প্রতি মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন সমর্থিত সাগরের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ থেকে আব্দুল আলিম তুষারের নেতৃত্বাধীন গ্রুপে যোগ দেয়। একারণেই সাগর গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মীরা তার ওপর হামলা করে।

এ ঘটনায় বুধবার নিহতের ভাই ১১ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

একের পর এক এসব প্রাণহানির ঘটনায় মামলা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না আসামিরা। আবার কদাচিৎ ধরা পড়লেও কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত এসব ঘটনায় জড়িতদের কেউই শাস্তি পায়নি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.