Sylhet Today 24 PRINT

সিলেট- ৪ : ‘অনিচ্ছুক’ আরিফে কপাল পুড়ল আগ্রহীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

আরিফুল হক চৌধুরী মানেই যেনো নাটকীয়তা। টান টান উত্তেজনা আর অনিশ্চয়তা। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। নানান নাটকীয়তা আর অনিশ্চয়তা শেষে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার কথা জানালেন আরিফ। আর এতে কপাল পড়ছে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় ছিলেন।

স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অনেকে। এর মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির দুবারের সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদ, বিএনপি-দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক–বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান জামান উল্লেখযোগ্য।

আর দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। এই আসনের মনোনয়ন পেতে গণসংযোগে মাঠে নেমেছিলেন।

সিলেট-১ আসন না পেলে পুণরায় সিলেট সিটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন সাবেক এই মেয়র। কোনভাবেই সিলেট নগর ছাড়তে চান না বলেও জানেয়েছিলেন তিনি। অথচ নগর ছাড়তে ‘অনিচ্ছুক’ আরিফকে সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী করছে বিএনপি।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সারা দেশে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে। ৬৩টি আসনে প্রার্থী ফাঁকা রাখে দলটি, যার মধ্যে সিলেট-৪ আসন ছিল। আর সিলেট-১ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাসায় তলব করে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। বুধবার (৫ নভেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভার্চুয়ালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতিতে আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

জানা যায়, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট-৪ আসন গঠিত। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি ও শ্রীপুর এই আসনে রয়েছে। দেশের অন্যতম স্থলবন্দর তামাবিল এই আসনে অবস্থিত। তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছেই আসনটির গুরুত্ব বেশি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনীতির মাঠের হালচাল। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভোটের মাঠে নেই। ফলে এবার এই আসনে জয়ের বড় সুযোগ দেখছে বিএনপি ও জামায়াত।

জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন দলটির জেলা সেক্রেটারি জয়রাল আবেদীন। আর বিএনপির অন্তত হাফ ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে সক্রিয় ছিলেন। প্রতিদিনই গণসংযোগ চালিয়ে আসছিলেন। এমনকি গত সোমবার সিলেটের অন্য ৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার পরও মাঠে সক্রিয় ছিলেন এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে দল থেকে এখানে আরিফকে ডেকে আনায় বঞ্চিত হতে হচ্ছে অন্যদের।

জানা যায়, সিলেট-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জয়নালের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তিনি এর আগে জৈন্তাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই তাকে টেক্কা দিতে শক্ত প্রার্থী খুঁজছিলো বিএনপি। এ কারণে নগর থেকে উড়িয়ে এই সীমান্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরিফকে।

এ প্রসঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দলের উচ্চপর্যায় থেকে তাঁকে সিলেট-১-এর পরিবর্তে বেশ কয়েকবার সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বললেও তিনি রাজি হননি। গতকাল রাতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁকে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হতে নির্দেশনা দেন। এ নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ নেই।

আরিফুল হক চৌধুরী জানান, দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশ আমি কখনোই অমান্য করিনি, করবো-ও না। তাই সিলেট-৪ আসনেই নির্বাচন করবো, সব আল্লাহর ইচ্ছা।

তিনি বলেন, চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বী। অতীতেও দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করে আসছি। সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে এই আসনেরমনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাছে দলের কোনো কাগজ আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অফিসিয়ালি কিছু বলতে পারব না। তাছাড়া এই বিষয়ে এখনো আমাকে দলের কোনো পর্যায় থেকে কিছু অবহিত করা হয়নি। আরিফুল হক চৌধুরী যদি নিজে থেকে কোনো ঘোষণা দিয়ে থাকেন, তাহলে তা আমি জানি না।

তবে দল যাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবে তার সাথেই থাকবেন বলে জানান মিফতা।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
✉ sylhettoday24@gmail.com ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.