Sylhet Today 24 PRINT

বিবাহিত, বিতর্কিত, ইয়াবা ব্যবসায় অভিযুক্তরাও ছাত্রলীগ কমিটিতে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রায় ৭ মাস পর হওয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি শুরুতেই সমালোচনার মুখে পড়েছে বিবাহিত, বিতর্কিত, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, হত্যা ও চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িতদের কমিটিতে রাখার কারণে। সোমবার ঘোষিত এ কমিটিতে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত কয়েকজন এমন অভিযোগ ওঠেছে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি কমিটি ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন না করেই গঠন করা হয়েছে ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া এ কমিটিতে সহসভাপতি পদে রাখা হয়েছে ৬১ জনকে, আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাখা হয়েছে ১১ জন করে। এ ছাড়া ৩২ জন সম্পাদক, ১১১ জন উপসম্পাদক, ৪৬ জন সহসম্পাদক আছেন। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে ২৭ জনকে। কমিটির কলেবর ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির ১ নম্বর সহসভাপতি আজিজুল হক রানা পদ পাওয়ার পর ঘটা করে বিয়ে করেন।

২নং সহসভাপতি এরশাদুর রহমান চৌধুরী ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার বয়স ২৯ পেরিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কাজী এনায়েতকে ৩ নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে। শাহবাগের ফুলের দোকানে চাঁদাবাজি ও শিক্ষা ভবনের টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আনোয়ার হোসেন আনু সহসভাপতি পদ পেয়েছেন। তিনি সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে সলিমুল্লাহ হলের আশপাশ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অনুসারীদের দিয়ে ছিনতাই করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হয়েছিলেন। হলের প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে হলের চারটি কক্ষ দখল করে তিনি বহিরাগতদের আশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

আশিকুল পাঠান সেতুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গত বছর ক্যাম্পাসে প্রাইভেটকার চাপা দিয়ে এক রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চাঁদাবাজি ও ইয়াবা ব্যবসায় তার অনুসারী কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।

ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইমকে সহসভাপতি করা হয়েছে। চাঁদা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র আসাদুজ্জামান ফারুক মারা যান। সুইম এ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এ ঘটনার পরই তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। ঢাকা কলেজ ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

সহসভাপতি আবদুল বাসেত গালীব গত কমিটির উপসম্পাদক ছিলেন। কয়েক মাস আগে ঢাকা কলেজে পুলিশের অভিযানে গুলিসহ আটক হয়েছিলেন তিনি। কিছুদিন জেলও খাটেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলামও সহসভাপতি হয়েছেন। নানা অপরাধে জড়িয়ে ছাত্রজীবন শেষ করতে পারেননি তিনি।

হাজী মুহম্মদ মহসীন হল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান পেয়েছেন সহসভাপতির পদ। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ইয়াবা চালানের সময় আটককৃতরা জবানবন্দিতে মেহেদীর নাম বলেছিল।

সৃজন ঘোষ সজীবকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-ক্রীড়া সম্পাদক। চাঁদা না দেওয়ায় ২০১৪ সালে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বি এম এহতেশাম হয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি কবি জসীমউদ্দীন হলের সাধারণ সম্পাদক। দর্শন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। ঠিকমতো শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ায় তিনি ছাত্রত্ব হারিয়েছেন।

এ ছাড়া সহসভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়া আরও অনেকেই ইতিমধ্যে নিয়মিত ছাত্রজীবন শেষ করেছেন। তবে অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সে কিংবা দ্বিতীয় দফায় স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হয়ে 'ছাত্রত্ব' রক্ষা করেছেন।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেক নেতা বিবাহিত, এমন অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাই একে অন্যকে দোষারোপ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সহসভাপতি আজিজুল হক রানা, সুপ্রিয় কুণ্ডু রাজেশ, নুসরাত জাহান নূপুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম শাহেদ ও সহসম্পাদক শহিদ চৌধুরী।

সিলেটের গোলাপগঞ্জের সন্তান শহিদ চৌধুরী যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের নেতা। তিনি বিবাহিত ও সন্তানের জনক।

গত বছর ২৬ জুলাই দ্বিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি হিসেবে সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এস এম জাকির হোসাইন নির্বাচিত হন। এর পরদিন ছাত্রলীগের সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষিত হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.