Sylhet Today 24 PRINT

ফের আটকে গেল টাঙ্গাইল উপনির্বাচন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৫ মার্চ, ২০১৬

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীকে আপিলের অনুমতি দিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ নির্বাচন আবারও স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ইয়াসিন খান জানান, আদালত কাদের সিদ্দিকীর ‘লিভ টু আপিল’ মঞ্জুর করে ৩ মে আপিল শুনানির দিন ঠিক করে দিয়েন।

“ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইলের নির্বাচন স্থগিত থাকবে বলে আদালত জানিয়েছেন।”

এর আগে একবার হাই কোর্ট কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছিলেন এবং নির্বাচন স্থগিত করেছিলেন। পরবর্তীতে হাই কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ কাদের সিদ্দিকীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন। এর ফলে ওই আসনের স্থগিত হওয়া নির্বাচন কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছিল।

এরপর হাই কোর্টের সেই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন কাদের সিদ্দিকী। তার আবেদন মঞ্জুর করে মঙ্গলবার ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করে দিলেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার সকালে আপিল বিভাগ বসার পরপরই এজলাসে প্রবেশ করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। তার পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী।  রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘আমি একজন আইনজীবীর ছেলে। আমি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করছি ন্যায়বিচার পাব। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে হাই কোর্ট আমার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছিলেন। পরবর্তীতে হাই কোর্ট আমার আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছিলেন। হাই কোর্টের সে আদেশের বিরুদ্ধে আমি সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করেছিলাম। আপিলের অনুমতি পেয়েছি। আশা করছি আপিলের শুনানি শেষে ন্যায়বিচার পাব।’

গত ৩ মার্চ শুনানির জন্য এটি আপিল বিভাগের তালিকাতে ছিল। সেদিন তারিখ পরিবর্তন করে ১৩ মার্চ শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। তবে ১৩ মার্চ কার্যতালিকায় আসলেও তার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৪ মার্চ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপনির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর আদেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক রিট পিটিশনের শুনানি শেষে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে তা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের আদেশ দেন।

এ ছাড়া ঋণ খেলাপি দেখিয়ে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিল প্রশ্নে আদালত সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেন। ওইদিনই আদেশ পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে জানান।

কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ইসির পক্ষে গত বছর ২৬ অক্টোবর আবেদন দায়ের করেন অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড ব্যারিস্টার ড. মুহাম্মদ ইয়াসিন খান। ২৭ অক্টোবর টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার কোর্ট। কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ইসির আবেদন বিষয়ে ২ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়েছিল।

ওইদিন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসনের উপনির্বাচন ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে হাই কোর্টের জারি করা রুল এ সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এ সময়ের মধ্যে টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও আদেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী রুলের ওপর হাই কোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কাদের সিদ্দিকী গত বছর ২০ অক্টোবর হাই কোর্টে রিটটি দায়ের করেন। এর আগে ১৩ অক্টোবর টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইকালে ঋণখেলাপির দায়ে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে। এরপর এ দুই প্রার্থী ইসিতে আপিল করেন। ইসি এ দুই প্রার্থীর উপস্থিতিতে শুনানি করে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলিগ জামায়াত বিষয়ে বক্তব্য দেন। লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হলে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ ছাড়া তাকে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।

দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে লতিফ সিদ্দিকী গত বছর ১ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। ফলে আসনটি শূন্য হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর শূন্য আসন বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এরপর ইসি এ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সে মোতাবেক গত বছর ১০ নভেম্বর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.