Sylhet Today 24 PRINT

এমসি কলেজ ছাত্রলীগ : ৬ বছর ধরে কমিটি নেই, আধিপত্য বিস্তারে সংঘাতে বহিরাগতরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৮ মার্চ, ২০১৬

২০১০ সালের ১৩ জুলাই ছাত্রলীগ নেতা উদয়ন সিংহ পলাশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাতিল করা হয়েছিলো সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি। এরপর ছয় বছরেও কমিটি গঠিত হয়নি। কমিটি না থাকায় কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা বারবার জড়িয়ে পড়ছেন সংঘাতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহিংসতায় অংশ নিচ্ছে ও মদদ দিচ্ছে বহিরাগতরা।

ছাত্রলীগের টিলাগড়কেন্দ্রীক বলয়ে বিভক্তি ও দীর্ঘদিন ধরে কমিটিহীনতার কারণে এমসি কলেজে বারবার সংঘাতের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন ছাত্রলীগ নেতারাও, দ্রুত কমিটি ঘোষণার দাবি তাদের।

সর্বশেষ গত ৭ মার্চ এমসি কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু ও বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষে আহত হন অনন্ত ১০ জন। এর আগেও বেশ কয়েকদফা এই দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।

দীর্ঘদিন ধরেই এমসি কলেজে ছাত্র শিবির বা ছাত্রদলের প্রকাশ্যে তেমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই। কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন ছাড়া কেবল ছাত্রলীগের অবস্থানই ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান। ক্যাম্পাসে একক অবস্থান সত্ত্বেও অর্ন্তকোন্দলে বারবার নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে ছাত্রলীগ। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম।

সংঘাতে নিজ সংগঠনের কর্মীকে খুন ও পঙ্গু করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কথায় কথায় অস্ত্রের মহড়া দেওয়া, এমনকি শত বছরের পুরনো ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও আছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।



জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৩ সালে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়। দুই বছর মেয়াদী এই কমিটি স্থগিত করা হয় ২০০৭ সালে। এরপর আর এই কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হয় নি। কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বহিরাগতরাই বিভিন্ন গ্রুপের ছত্রছায়ায় থেকে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ করছেন।

২০০৩ সালে তাজিম উদ্দিনকে সভাপতি, সাইফুল ইসলাম টিপুকে সাধারণ সম্পাদক এবং পংকজ পুরকায়স্থকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিলো।

এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা জানান, টিলাগড়কেন্দ্রীক ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ের প্রভাব ফেলছে কলেজের রাজনীতিতে। যার ফলে বার বার সংঘর্ষ বাঁধছে, রক্তপাত হচ্ছে। এমসি কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, টিলাগড়কেন্দ্রীক রাজনীতি যখন উত্তপ্ত হয় তখনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। বহিরাগত নেতারা কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টার কারণে বার বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিলাগড়ে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রলীগের তিনটি গ্রুপ। এগুলো রণজিৎ, আজাদ ও বাবলা-আসাদ গ্রুপ নামে পরিচিত। এক সময় টিলাগড়ে একক আধিপত্য ছিল আজাদ-রণজিৎ গ্রুপের।

পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর আশীর্বাদপুষ্ঠ হয়ে আসাদ-বাবলা গ্রুপ নামে নতুন গ্রুপের সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ ও রণজিৎ সরকার গ্রুপের নেতারা। মূলত প্রভাব ধরে রাখতেই এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে একের পর এক সংঘর্ষে জড়াচ্ছে বিবদমান এই গ্রুপ দুটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমসি কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমসি কলেজে কোন কমিটি নেই। কমিটি না থাকার কারণে বহিরাগতরা বারবার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন কলেজ ক্যাম্পাসে। আর তাদের কারণেই বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। যার কারণে বহিরাগতরা প্রভাব বিস্তার করেছে। বহিরাগতরা নির্দিষ্ট কিছু নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে যেমন সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত করছে তেমনি সাধারণ ছাত্রদের উত্যক্ত করছে।
 
তিনি বলেন, দ্রুত কলেজে কমিটি হওয়া প্রয়োজন। ভালো, ত্যাগী, মেধাবীদের দ্বারা কমিটি করলে যেমন সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, তেমনি কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম কমবে।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। যা খুবই দুঃখজনক। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে কমিটি। কমিটি না থাকায় এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম আজ তুলনামূলক মন্থর।
 
তিনি আরও বলেন, আমরা জেলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করেছি দ্রুত এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার জন্য।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.