Sylhet Today 24 PRINT

ইনুর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ, জাসদের গৃহদাহ আদালতে গড়াচ্ছে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৪ মার্চ, ২০১৬

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্ব দলের মধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর বাইরে ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া অংশের নেতারা দলীয় প্রতীক মশাল এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দখল পেতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) জাতীয় সংসদ এলাকার এমপি হোস্টেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মইন উদ্দীন খান বাদল ও নাজমুল হক প্রধানের অংশটি এমন ঘোষণা দিলেও ঐক্যের জন্য দরজা এখনও খোলা বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

গত ১২ মার্চ জাসদের জাতীয় কাউন্সিলের নির্বাচনী অধিবেশন থেকে বেরিয়ে এসে একই দলের নামে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়, যেখানে জাসদের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি এবং সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদলকে করা হয়েছে কার্যকরী সভাপতি।

এদিন সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পরিসর আরও বাড়ানোর কথা জানানো হয়।

সহসভাপতি হিসেবে রেজাউল করিম তানসেন, ইন্দু নন্দন দত্ত, আবদুল হাই তালুকদার, খোরশেদ আলম খোকা, এটিএম মহব্বত আলী, কলন্দর আলী ও সৈয়দুল আলমের কথা জানান নাজমুল হক প্রধান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ খালেদ, মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, করিম শিকদার, মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু, মেহাম্মদ মহসীন; সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আবুল কালাম আজাদ, বীণা শিকদার, আব্দুর রাজ্জাক, ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী, এমরান আল আমিনের নাম ঘোষণা করেন তিনি। এছাড়া ইউনুছুর রহমানকে দপ্তর সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে।

একটি স্থায়ী কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান ও মইন উদ্দিন খান বাদলের সঙ্গে লুৎফা তাহের, রেজাউল করিম তানসেন, আবু মো. হাশেম, ইন্দু নন্দন দত্ত, মনসুর আহমেদ আগা, মুশতাক আহমেদ আগা, মুশতাক হোসেন, মোহাম্মদ খালেদ ও ইঞ্জিনিয়ার সফিউদ্দিন আহমেদ বেলালকে রাখা হয়েছে।

খুব শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে বলে নাজমুল হক প্রধান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাসদে ভাঙনের কারণ নিয়ে তিনি বলেন, “জাসদের নির্বাচনী কাউন্সিলে জনাব ইনুর অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ কোন আকস্মিক ঘটনা নয়, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তবে ঐক্যের দরজা আমরা খোলা রাখছি।”

এক প্রশ্নের জবাবে মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চারজনের নামে। এরা হলেন- শ্রমিক নেতা আব্দুল কাদের, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, কাজী আরেফ আহমেদ এবং হাসানুল হক ইনু। এর মধ্যে কাজী আরেফ মারা গেছেন।

“আব্দুল কাদের অসুস্থ, তিনি আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য আমরা আদালতে যাব। বিবাদ মিটিয়ে দেয়ার আবেদন জানাব।”

দলীয় প্রতীকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা মেজরিটি নিবন্ধন তাদের, প্রতীকও তাদের। দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৪ জনের একজন মারা গেছেন। একজন অসুস্থ আর একজন তার অবস্থান পরিষ্কার করেননি। বাকি ১১ জনের মধ্যে মধ্যে সাতজন আমাদের সঙ্গে আছেন। তাদের মধ্যে- শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান, আমি, ইন্দু নন্দন দত্ত, মনসুর আহমেদ আগা, ড. মুশতাক হোসেন, মোহাম্মদ খালেদ এখানে উপস্থিত আছেন।

“সংসদ সদস্য সদস্য লুৎফা তাহের আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে বিদেশে গেছেন তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। রেজাউল করিম তানসেন বগুড়া থেকে এখানে পৌঁছাতে পারেননি, তার কাছ থেকে আপনারা জেনে নিতে পারেন। বোঝাই যাচ্ছে মেজরিটি কারা।”

বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে নির্বাচনে কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়ে বাদল বলেন, “নির্বাচন কমিশনে আমরাও গেছি উনারাও গেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি। ইসি দেখবে মেজরিটি কে। তখন তারা বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।”

সংসদ সদস্য পদ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জাসদের ছয় জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে চারজন আমাদের সঙ্গে, এখানে কোনো সঙ্কট নেই। এই চারজন যখন স্পিকারকে জানাব তখন তিনি বিবেচনা করবেন।”

শরীফ নুরুল আম্বিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “খণ্ডিত জাসদ কেউ রাখতে পারবে না। এর জবাব কর্মীরা দেবে। ইসিতে ১৩ নম্বর নিবন্ধন আমাদের। বিধান অনুযায়ী আমরাই জাসদ আপহোল্ড করব। প্রতীক অক্ষত থাকবে।

তবে ঐক্যের পূর্বশর্ত হিসেবে যে কাউন্সিলে হাসানুল হক ইনু ও শিরিন আখতার নেতৃত্বাধীন কমিটি হয়েছে তা বাতিলের কথা বলেছেন তিনি। অবশ্য তাদের এই এরইমধ্যে ইনু খারিজ করে দিয়েছেন বলে নাজমুল হক প্রধান জানিয়েছেন।

কাউন্সিলে ইনুর সভাপতি হওয়া নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকলেও শিরিন আখতারকে সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে বিরোধ থেকে বেরিয়ে যান আম্বিয়া-বাদলরা। সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রধানকে এই পদে চেয়েছিলেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাজমুল হক প্রধান বলেন, “হাসানুল হক ইনুর অগণতান্ত্রিক আচরণ, আর্থিক আচরণে অস্বচ্ছতা, দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে নিজের ইচ্ছামতো তুলে ধরার প্রতিবাদ সংগঠনের ভেতরে বহু দিন ধরেই চলছিল। তিনি কখনোই নিজেকে সংশোধন করেননি।”

নিজেদের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অংশীদার দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা রাজনৈতিক কারণেই ১৪ দলের অংশীদার। ১৪ দলের ভেতরে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ভুল সংশোধন করে মহাজোট সরকারের সাফল্য নিশ্চিত করতে চাই।

“আজ যারা জঙ্গিবাদ খতমের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে জোট সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সৌভাগ্যবান হচ্ছেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত তাদের অবস্থান পরিষ্কার ছিল না।”

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.