Sylhet Today 24 PRINT

গ্রেফতার হতে পারেন খালেদা: কৌতুহল আদালত পাড়ায়

নিউজ ডেস্ক  |  ০৪ মার্চ, ২০১৫

২৫ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলছেন পরোয়ানা এখনও পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি। এদিকে এক আবেদনে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন খালেদার আইনজীবীরা, আদালত এক্ষেত্রে বুধবার শুনানির দিন ধার্য্য করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী ঘটতে যাচ্ছে- এ নিয়ে আলোচনা চলছে সব মহলে। জনগণের দৃষ্টি নিবদ্ধ আদালতের দিকে।

এদিকে শর্তসাপেক্ষে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদার আইনজীবি ও উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন- পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং কার্যালয়ে পুনরায় ঢোকার নিশ্চয়তা পেলে আদালতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

শর্তসাপেক্ষ আত্মসমর্পণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন উত্তর দেওয়া হয়নি। ফলে আদালতে আত্মসমর্পণ কিংবা হাজিরা দিলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে। সরকার দলীয় অংশ মনে করছে বেগম খালেদা জিয়া বাইরে থাকা মানে আন্দোলনের নামে নাশকতাকে দীর্ঘায়িত করা। তারা এই নাশকতাকে তাদের ভাষায় সমূলে উৎপাটন করতে চান।

এদিকে আদালতে হাজিরার দিন হঠাত করে আরাফাত রহমান কোকোর কুলখানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে বুধবার।  এ নিয়ে কানাঘুষো চলছে সর্বত্র। 

জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা না দেওয়ায় জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়না জারি করেন রাজধানী ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ জজ আদালত-৩। বুধবার এই মামলার পরবর্তি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন রয়েছে।

লাগাতার অবরোধ ডেকে গত দুই মাস ধরে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা আদালতে অনুপস্থিত থাকায় গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। বুধবার ওই দুই মামলার শুনানির আগের দিন তাকে গ্রেপ্তারের আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার তিনি বিচারিক আদালতে ওই পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও এখনও আমরা ওয়ারেন্ট হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে হাজির হতে হতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক।”

তবে খালেদা জিয়া ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছেন দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, “প্রতিদিন তার রাজনৈতিক কার্যালয় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ঘেরাও করে রাখছে। এমনকি বর্তমান সরকারের একজন ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর নেতৃত্বেও তার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন।

“আরেকটা ব্যাপার আমাদের মনে হচ্ছে, উনাকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য একবার রাজনৈতিক কার্যালয়ে থেকে বের হলে তাকে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না।”

তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে এবং পুনরায় কার্যালয়ে ঢোকার নিশ্চয়তা ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে দিলে আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে খালেদা আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানান খন্দকার মাহবুব।

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলতে কী বোঝাচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন আমার মক্কেল বেগম খালেদা জিয়া বুঝতে পারবেন, তিনি বের হলে তাকে মেরে ফেলবে না, নাজেহাল করবে না, কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে মাননীয় বিচারক তাকে যদি জামিন দেন, তাহলে যদি তিনি তার কার্যালয়ে ফেরত যেতে পারেন।”

আদালতে যাওয়ার আগে এভাবে শর্ত দেওয়া যায় কি না- এই প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার, আদালত ও দুদক এক হয়ে গেছে। এই জন্যই শর্ত।”

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ স্থগিতে বিচারিক আদালতের পাশাপাশি হাই কোর্টেও আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।

“বিচারক পরিবর্তনের আবেদনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের আদালতে এই আবেদনের শুনানি হবে।”

খন্দকার মাহবুব বলেন, “আপনারা জানেন, আইনজীবী হিসাবে তার সঙ্গে আমরা দেখা করতে পারছি না। আপনারা দেখেছেন, আমরা একবার আলোচনার জন্য বসেছিলাম, কিভাবে পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে সেখানে ঘেরাও করা হয়েছিল।

“বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যেভাবে আচরণ করছে, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।”

খালেদার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে এভাবে বিভিন্ন আবেদন দায়ের ঠিক হচ্ছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন, “এই নির্দেশনা আগেই নেওয়া আছে।”

দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি পুলিশের বাধায় কার্যালয় থেকে বের হতে না পারে সেখানে অবস্থান নেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এরপর ওই কার্যালয় ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। কয়েকদিন বাদে পুলিশি বেষ্টনি সরিয়ে নেওয়া হলেও কার্যালয় ছাড়েননি খালেদা। মালয়েশিয়া থেকে ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের লাশ এলে কার্যালয়ে থেকেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানান তিনি। কয়েকদিন ওই কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ঢোকা-বের হওয়া অবাধ হলেও ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। সেখানে খাবার ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মাঝে একবার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.