Sylhet Today 24 PRINT

‘আল্লাহু আকবার’ বলে মানুষ হত্যা জিহাদ নয় : আল্লামা শফী

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৪ জুলাই, ২০১৬

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের পাশে ঈদের দিন হামলার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লাহ শাহ আহমদ শফী বলেছেন, 'কোনো মদ পানকারী আল্লাহু আকবার বলে মদ পান করলে যেমন কেউ সেটাকে ইসলামী মদ বলবে না, তেমনি কোন সন্ত্রাসী আল্লাহু আকবার বা ইসলামের নাম নিয়ে মানুষ হত্যাকে জিহাদ বলবে না।’

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিবৃতিতে আল্লামা শফী এসব কথা বলেন বলে হেফাজত আমিরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ জানান।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ‘বিদেশী, অমুসলিম ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের টার্গেট করে দেশে ইসলামের নাম ব্যবহার করে গুলশান ও শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা দেশে ও জাতির জন্য অশনি সংকেত।

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী কোন পক্ষের ইন্ধন ছাড়া বিচ্ছিন্ন গুটিকয়েক অপরাধীর পক্ষে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা অসম্ভব। এই দেশ থেকে ইসলামকে উচ্ছেদ করে আধিপত্য ও শোষণের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতেই এই হামলা। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করে কাউকে বিনা কারণে হত্যা ও সমাজে ভীতি তৈরির নাম কখনোই জিহাদ নয় বরং ইসলামের জিহাদ হচ্ছে অন্যায় আগ্রাসন ও সন্ত্রাস দমনের।’

হেফাজতের আমির বলেন, ‘বিদেশি, অমুসলিম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের হত্যা করা, হত্যার হুমকি দেওয়া, মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় হামলা প্রচেষ্টা চরম উদ্বেগজনক। সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পেছনে ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করতে হবে।’

বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করার জন্য এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও জাতীয় ঐক্যকে বাধাগ্রস্ত ও ধ্বংস করার জন্যে বিভিন্ন অপশক্তি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা এদেশ থেকে ইসলামকে উচ্ছেদ করে আধিপত্য ও শোষণের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই কাজে তারা কলেজ-ইউনিভার্সিটির উচ্চ শিক্ষিত ছাত্রসহ সরলমনা কিছু মুসলিম যুবককে আদর্শিকভাবে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত করে ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে।’

আল্লামা শফী এ ব্যাপারে দেশের আলেম সমাজ, ইসলামী নেতৃবৃন্দ, মসজিদের ইমাম ও খতিবকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান ও শিক্ষার প্রচার-প্রসারে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘কোনো মদ পানকারী আল্লাহু আকবার বলে মদ পান করলে যেমন কেউ সেটাকে ইসলামী মদ বলবে না, তেমনি কোন সন্ত্রাসী আল্লাহু আকবার বা ইসলামের নাম নিয়ে মানুষ হত্যাকে জিহাদ বলবে না।’

শফী বলেন, ‘সৎ ও সরল চিন্তার প্রতিটি মানুষই কোন না কোনভাবে ধর্মের প্রতি দুর্বল থাকে। কারণ ধর্ম মানুষকে সৎ ও আদর্শবান হতে সাহায্য করে। আর দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার অনুপস্থিতির কারণে সাধারণ শিক্ষিত বিশাল ছাত্রসমাজ পরিপূর্ণ সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শত্রুরা এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে। তারা সাধারণ শিক্ষিত তরুণদেরকে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে এ কারণে সক্ষম হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মহীন শিক্ষানীতি এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নামে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জাতির জন্যে সন্ত্রাস ও কথিত জঙ্গিবাদের বিপর্যয় ডেকে আনছে।’

ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও মসজিদের ইমাম-খতিবদেরকে উদ্দেশ করে হেফাজত আমীর বলেন, ‘দেশকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে আরো বেশী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানুষের দ্বারে দ্বারে শান্তির ধর্ম ইসলামের সঠিক শিক্ষা পৌঁছে দিতে হবে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সভা-সেমিনার করা যেতে পারে। এসব সভা-সেমিনারে ইসলামের সার্বিক বিধি-বিধান তুলে ধরতে হবে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করে কাউকে বিনা কারণে হত্যা ও সমাজে ভীতি তৈরির নাম কখনোই জিহাদ নয় বরং ইসলামের জিহাদ হচ্ছে অন্যায় আগ্রাসন ও সন্ত্রাস-নৈরাজ্য দমনের।’

মসজিদের ইমাম ও মাহফিলে পুলিশের নজরদারির সমালোচনা করে আল্লামা শফী বলেন ,‘দেশ থেকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকে নির্মূল করতে যদি প্রকৃত অর্থে আন্তরিক হউন, তবে মসজিদের ইমাম-খতিব ও মাহফিল নজরদারি করার কথা বলে ভীতি তৈরি ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড সংকোচিত করিয়েন না। বরং নজরদারির পরিবর্তে আলেমদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে সহযোগিতা করুন। কারণ সমাজের মানুষের মধ্যে সৎ ভাবে জীবন যাপনের যে মানসিকতা ভেতর থেকে কাজ করে সেটা এই ইমাম ও খতিবরাই করে থাকে।

তিনি বলেন, ‘মসজিদে খতিব নজরদারির কথা বলার মানেই হচ্ছে, সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের দায় ইসলামের উপর চাপানোর চেষ্টা। বাংলাদেশের উপর এখন সারা বিশ্বের দৃষ্টি। খতিব নজরদারির সংবাদে বিশ্ববাসীর কাছে এমন বার্তা যাবে যে, বাংলাদেশের লাখ লাখ মসজিদের খতিব জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাজে জড়িত।’

‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ধরা পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আর নজরদারির কথা বলা হচ্ছে মসজিদের খতিব ও ওয়াজ মাহফিল। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সন্ত্রাস দমনে সরকারের প্রকৃত সদিচ্ছা নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে’ বলেন-শফী।

শফী বলেন, ‘এই যে সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে বেশ কিছু বিদেশি অমুসলিম ব্যক্তিদের হত্যার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হলো, ইসলামে এর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। যেমন, অমুসলিমদের অধিকার ও নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে পড়িয়ে থাকি, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মনে রেখ, যদি কোনো মুসলমান কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষে মামলা দায়ের করব- (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং- ৩০৫২)।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.