Sylhet Today 24 PRINT

আধুনিক ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে : ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

অষ্টমবারের মত আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে ছাত্রলীগ। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দেওয়া ফুলের তোড়া গ্রহণ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে আধুনিক ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। দেশ ও জাতির সেবা করতে হবে, দেশপ্রেমিক হতে হবে। দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধের অনুভূতি থাকতে হবে।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের খোলা চত্বরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ছাত্র হিসেবে তোমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে লেখাপড়া করা, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। তোমাদের জন্য একটাই সম্পদ রেখে যাচ্ছি তা হচ্ছে শিক্ষা। কেননা তোমাদের মধ্য থেকেই তো গড়ে উঠবে নেতা, প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী, এমপি। তোমাদেরই তো নেতৃত্ব দিতে হবে, দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তাই তোমাদের পড়ালেখার প্রতি সবচেয়ে মনোযোগী হতে হবে। বাবা-মা, শিক্ষক ও মুরুব্বীদের কথা শুনতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'নিজে কী পেলাম, সেটি বড় কথা নয়। দেশ ও জাতিকে কী দিতে পারলাম- সেটিই বড় কথা। সবাইকে এটি মনে রাখতে হবে। রাজনীতিবিদ হতে হলে দেশ ও মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে।'

এই অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শাখার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী যোগ দেন। তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গণভবন চত্বর। বক্তৃতার একপর্যায়ে সেখানে বৃষ্টি শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বৃষ্টির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনা অব্যাহত রাখার দাবি জানান। পরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই তারা গোটা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'তোমরা গণভবনে এসেছো। গণভবন ধন্য। এই মাটি ধন্য।'

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। পরে টানা অষ্টমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানান ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে আসা তার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়া আওয়ামী লীগের নেতারাও তার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে নিজেদের জীবন গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে সাধারণ সম্পাদক হয়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন কেবল দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে। দেশকে তিনি স্বাধীন করেছেন। এই দেশ স্বাধীন করার জন্য কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই দেশকে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, 'আমি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে বই-খাতা তুলে দিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের মূলনীতির প্রথম কথাই হচ্ছে শিক্ষা। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা ছাত্রদের হাত অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। খালি অস্ত্র আর অস্ত্র। আর আমরা দিয়েছিলাম কলম। কেননা কলমের শক্তিই বড় শক্তি। অসির চেয়ে মসি বড়।'

দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। আওয়ামী লীগকে বলেছিলাম, ছাত্রলীগকেও বলবো। লেখাপড়ার অবসরে নিজ নিজ এলাকায় গেলে খুঁজে বের করতে হবে কোনো মানুষ গৃহহারা আছে কী-না, দরিদ্র আছে কি-না। তাদের তালিকা করতে হবে, দরিদ্রদের সহযোগিতা করতে হবে। আমরা চাই দেশের কোনো মানুষ গৃহহারা ও ভূমিহীন থাকবে না। দরিদ্রও থাকবে না।'

তিনি বলেন, 'আমরা নিরক্ষরতামুক্ত দেশ গড়ে তুলতে চাই। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অতীতের সহযোগিতায় এটি অনেকটা সফলও হয়েছে। এখনও নেতাকর্মীদের পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পর প্রতিটি নিরক্ষর মানুষকে অন্তত অক্ষর জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।'

একই সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ- এ কথা কেবল বক্তৃতায় বললে হবে না। কার্যকর করতে হবে। কোনো ছেলে-মেয়ে যেন বিপথে না যায়। এটি পিতা-মাতা-অভিভাবক, শিক্ষকদেরও খেয়াল রাখতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। ধর্মের নামে মানুষ খুন করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। এটাও মসজিদে, মসজিদে এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে। আর ছাত্রদের মাদকাসক্তিতে জড়ানো যাবে না। যে আসক্তি মানুষের মেধা ও কর্মশক্তি নষ্ট করে দেয়, সেটিতে জড়ানোর দরকার কী?'

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে এই সংগঠনের অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতাই বলে গেছেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। এদেশের যত অধিকার আদায়ের আন্দোলন হয়েছে, ছাত্রলীগ তার সবগুলোতেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই ছাত্রলীগের জন্ম আওয়ামী লীগেরও আগে। অর্থাৎ ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগেরও মুরুব্বি।

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিজের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী ছিলাম। স্কুলে থাকতেই ছাত্রলীগ শুরু করি। কলেজজীবনে কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগের সঙ্গে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে ছাত্রলীগের একজন সদস্য করা হয়, নির্বাচন করে আমরা জয়ী হই।'

বাংলাদেশকে দারিদ্র্যশূন্য দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই দেশ হবে একেবারে দারিদ্র্যশূন্য দেশ। এই স্বপ্নই বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। ইনশাল্লাহ আমরা তা করতে পারবো। বাঙালি জাতি পারে, পারবে।'

একই সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'কোনো রকম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান এদেশের মাটিতে হবে না। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শান্তির দেশ। দেশে আর কোনো সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নও দেখতে চাই না। বাংলাদেশকে নিয়ে, এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনিও খেলতে পারবে না।'

বিএনপি ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদা জিয়ার জন্ম শিলিগুড়িতে, ভারতের মাটিতে। যাদের জন্ম বাংলাদেশেই না, তারা দেশকে ভালোবাসতে পারে না, দেশের জন্য কাজ করতে পারে না। মাটির টান না থাকলে দেশকে ভালোবাসা যায় না, কাজ করা যায় না। তাদের কোনো শিক্ষা নেই। তারা দেশের জন্য কী করবে!'

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'আমার জন্ম টুঙ্গিপাড়ায়। বঙ্গবন্ধুর জন্মও সেখানে। দেশের মাটিতে জন্ম হওয়ায় আমাদের মাটির প্রতি টান রয়েছে। কিন্তু জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া এবং পরে যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে এসেছে, তাদের কারো জন্ম ও মূল এদেশের মাটিতে নয়, ভারতের মাটিতে। দেশের মাটিতে জন্ম না হলে মাটির প্রতি টান কীভাবে থাকবে!'

পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকসহ ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিবরণও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, তাদের আগুনে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার আন্দোলনে মানুষ সাড়া দেয়নি। জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। ভবিষ্যতেও সাড়া দেবে না।

তিনি বলেন, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনি এবং যারা দুর্নীতি, লুটপাট ও মানিলন্ডারিং করেছে, এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছে- তারা যেন আর কখনোই ক্ষমতায় আসতে না পারে। যারা দেশের অকল্যাণ করে তারাও যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। কেননা এরা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। ক্ষমতায় আসলে আবারও এতিমের টাকা মেরে খাবে।

দেশ ও জাতির কল্যাণে তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষ কিছু না কিছু পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, মানুষ কিছু পায়। আর আওয়ামী লীগই যে দেশকে কিছু দিতে পারে, এটিও ছাত্রলীগকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.