Sylhet Today 24 PRINT

বহিষ্কৃতরা সম্পূর্ণ নির্দোষ, তারা হামলা প্রতিহত করেছে : মন্ত্রীর দাবি

বিবিসি বাংলা |  ০৫ নভেম্বর, ২০১৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনার জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া স্থানীয় এমপি এবং সরকারের মৎস্য মন্ত্রী ছায়েদুল হক দাবি করেছেন, সেখানকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন নিরাপত্তাহীনতা নেই।

সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগের যে তিন নেতাকে এই ঘটনায় সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে, তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং এরা বরং হিন্দুদের ওপর হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন।

এরপর স্থানীয় হিন্দুদের সম্পর্কে মন্ত্রীর কথিত এক মন্তব্য নিয়ে এখন বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার যে তীব্র সমালোচনা-বিতর্ক চলছে - তা অস্বীকার করেছেন এমপি ছায়েদুল হক।

মুসলমানদের পবিত্র কাবাঘরের প্রতি অবমাননাসূচক এক ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছে রসরাজ দাস নামে স্থানীয় এক হিন্দু যুবক - এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত রোববার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ওই ঘটনা ঘটে। রসরাজ দাসকে গত শুক্রবারই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিবিসি বাংলার মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে ছায়েদুল হক আরো বলেন, নাসিরনগরের ঘটনা নিয়ে তার সাথে প্রধানমন্ত্রীর কোন কথা হয় নি।

এ ঘটনার পর তিনি স্থানীয় হিন্দুদের 'মালাউন' বলে উল্লেখ করে 'তারা বাড়াবাড়ি করছে' এমন মন্তব্য করেছেন কিনা - এ প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, "এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি জীবনে কোন দিন এ কথা বলি নি।"

তিনি বলেন "আমি, ১৯৬৮ সালে নাসিরনগরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করি। পাঁচ বার এমপি হয়েছি, মন্ত্রী হয়েছি। এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনদিন হিন্দুদের 'মালাউনের বাচ্চা' বলি নাই।"

গত কয়েকদিন ধরেই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করা হচ্ছিল। এর পর শুক্রবার তিন জন আওয়ামী লীগ নেতাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

কিভাবে এ ঘটনা ঘটলো, এ সম্পর্কে দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় নেতা এবং সংসদসদস্য হিসেবে তার মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে ছায়েদুল হক বলেন - এটা ছিল অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বা জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটা গভীর ষড়যন্ত্র।

কিন্তু যারা এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ তারা তো তার দলেরই লোক - এ কথা বলা হলে তিনি বলেন, "না, এটা মিথ্যা, বানোয়াট এবং অসত্য। আমি এর নিন্দা জানাই।"

"আমার দলের মধ্যে কোন কোন্দল নেই। এই তিনজন নেতা বরং প্রতিহত করেছে।"

তাই যদি হবে তাহলে তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো? এ প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, "এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর নিন্দা জানাই আমি। তারা আমাদের জিজ্ঞেস করে নি। আরা নাসিরনগরে আসেও নি। পরিস্থিতিও দেখে নি।"

নাসিরনগরের ঘটনা নিয়ে কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার কথা হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, না, প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয় নি।

বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ ঘটনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এর দায় স্থানীয় প্রশাসন এড়াতে পারে না, জনপ্রতিনিধিরাও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন নি। স্থানীয় এমপি হিসেবে তিনি কি এর দায় নেবেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এ ঘটনার শুরু থেকে আমি সবকিছু জানি। স্থানীয় প্রশাসন, থানার ওসি, ইউএনও - তারা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। তাদের মধ্যে কোন গাফিলতি ছিল না।"

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও এ অভিযোগকে "মিথ্যা-বানোয়াট" বলেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

নাসিরনগরের ঘটনার জন্য এমপি হিসেবে তাকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন অনেকেই। তিনি কি পদত্যাগ করবেন? এর জবাবে বলেন, "নো নো পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। বরং আমি আমি যদি পদক্ষেপ না নিতাম, ঘটনা আরো বিস্তার লাভ করতে পারতো।"

স্থানীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যেও এখন আর কোন নিরাপত্তাহীনতা নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, "আমি রিকশা নিয়ে প্রতিটি ঘরে গিয়েছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছি আমরা।"

তাকে প্রশ্ন করা হয়, বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলার সময় সংখ্যালঘুদের অনেকে তাদের নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ করে তার নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতির কথা বলেছেন - একে তিনি বলবেন? জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, এগুলো মিথ্যা , বানোয়াট - নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন আতংক বা নিরাপত্তাহীনতা নেই, তারা খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.