Sylhet Today 24 PRINT

জাফর ইকবালের পাশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, বিব্রত সিলেটের নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২০ মে, ২০১৫

বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নিয়ে সরকারদলীয়  সাংসদ মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী কয়েসের বিতর্কিত মন্তব্য, হুমকি এবং ১৬ মে সিলেটে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের পদস্থ নেতাদের অংশগ্রহণে জাফর ইকবাল বিরোধী মিছিলের পর যখন এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তপ্ত; তখনই প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেছেন, জাফর ইকবালের পাশেই থাকছেন তিনি ও তার সংগঠন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাঁর ফেইসবুক পাতায় জাফর ইকবালের ছবিসহ একটি পোষ্টে লিখেছেন, “জাফর ইকবাল স্যারের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।”

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন - সেদিনের মিছিল আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগ করেনি। মিছিলের ব্যানার ছিল "আমরা সিলেটবাসী"।  এই মিছিলে অংশ নিয়ে নিজেরা বিব্রত উল্লেখ করে এই দুই নেতা বলেন, আগামীতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ ধরনের মিছিলে অংশ নেবেন না।

ছাত্রলীগ নেতারা তবে কেন জাফর ইকবাল বিরোধী সেই মিছিলে ছিলেন এমন প্রশ্ন করা হলে সামাদ সিলেটটুডে২৪ডটকমকে বলেন - ছাত্রলীগ করি বলে কি অন্য সামাজিক কর্মসূচিতে যাব না? আমি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ব্যক্তিগতভাবে ঐ কর্মসূচিতে গিয়েছি, সাংগঠনিকভাবে যাইনি।

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহি সংসদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের বক্তব্য সমর্থন করেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে সামাদ এড়িয়ে গিয়ে বলেন- ছাত্রলীগ এই ইস্যুতে কোন কর্মসূচি পালন করেনি, করার নির্দেশনাও নাই।

গত ৯ মে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ সামাদ চৌধুরী কয়েস শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাফর ইকবালকে ‘সিলেট বিদ্বেষী’ আখ্যায়িত করে বিষোদগার করেন। তিনি হুমকির স্বরে বলেন, "বড় কিছু হলে জাফর ইকবালকে কোর্ট পয়েন্টে এনে চাবুক মারতাম"

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জাফর ইকবালকে নিয়ে এ ধরনের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো প্রতিবাদ হয়। পরে সাংসদ কয়েসের সেই বক্তব্যের একটি অডিও প্রকাশ হয় সিলেটটুডে২৪ডটকম সহ বিভিন্ন মিডিয়ায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ওই সাংসদের কুশপুতুল পোড়ানোর ঘটনাও ঘটে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েসের ওই বক্তব্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও। বিভিন্ন স্থানে মিছিল হয়েছে লেখক ও শিক্ষক জাফর ইকবালের প্রতি বিষোদগারের প্রতিবাদে।

এদিকে ৬৭ বছরের পুরনো সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “একজন এমপি তার ব্যক্তিগত মতামত দিতে পারে। এটা কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও কোনও বক্তব্য না, বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরও বক্তব্য না। “ছাত্রলীগ সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে কখনো আপস করে না। অতীতের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ছাত্রলীগ সবসময় অসাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষেই কাজ করবে।”

তবে সিলেটে বিতর্কিত মন্তব্য করা সাংসদ কয়েসের পক্ষ নিয়ে "আমরা সিলেটবাসী" ব্যানারে উল্টো জাফর ইকবাল বিরোধী মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সংগঠনটির জেলা সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান সহ নেতাকর্মীরা। ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিনও। সেদিন জাফর ইকবাল সাংসদ কয়েসকে কটূক্তি করেছেন এমন দাবি করে মিছিল করা হলেও সেই মিছিলে অংশ নেয়া কর্মীরাই গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন - জাফর ইকবাল তাদের নেতাকে নিয়ে আসলে কিছু বলেছেন কিনা তারা তা জানেন না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.