Sylhet Today 24 PRINT

ছাত্র রাজনীতিতে অছাত্রদের হস্তক্ষেপে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসছে না

গোলটেবিল বৈঠকে সিলেটের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

ছাত্র রাজনীতিতে অছাত্রদের হস্তক্ষেপের কারণে সঠিক, সুযোগ্য নেতৃত্ব বেরিয়ে আসতে পারছে না। যার কারণেরই ছাত্র সংগঠনগুলো একটি আরেকটির শত্রুতে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা যেন প্রতিহিংসা না হয়। প্রতিযোগিতামুলক রাজনীতিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে এখন তরুণদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে তরুণদের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নষ্ট হচ্ছে। এজন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। ছাত্র সংসদ নির্বাচন অব্যাহত থাকলে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা থাকতো। একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা থাকতো। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে দলের অভ্যন্তরে তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

মঙ্গলবার সিলেটে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ ও অংশগ্রহণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সিলেটের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম  সম্পাদক ও ডিআই ফেলো আব্দুল কাইয়ুম ও তারান্নুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক সাংসদ ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিলেট বিভাগের সিনিয়র রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর সুদীপ্ত চৌধুরী।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, দেশে আজ তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টির প্লাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। রাজনীতিতে বিভাজন, আমলা, সচিব ও ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপের কারণে রাজনীতিতে অস্থিতিশলিতা এসেছে। ফলে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিভাজন ও প্রতিহিংসা বন্ধ করা না হলে নির্বাচনের সুষ্ট পরিবেশ ফিরে আসবে না। তিনি আরো বলেন, অতি উৎসাহী কিছু আমলা রাজনীতির সুষ্ঠ পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচী ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের মত হয়ে গেছে। টাকা দিয়ে সবকিছু করানো হয়। এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আমাদের সিনিয়র নেতাদের কারণে তরুণ সমাজ পথভ্রষ্ট। সব শ্রেণির তরুণকে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করায় ছাত্র রাজনীতির সুষ্ঠ পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষিত ছাত্র নেতা না থাকায় তাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা নেই। তিনি বলেন, রাজনীতি হতে হবে গণমানুষের জন্য। আমার ‘আমি’ কেন্দ্রীক রাজনীতি হলে সেখান থেকে ভালো নেতা বের হতে পারবে না। ত্রাসের রাজনীতি বন্ধ করে সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহবান জানান তিনি।

শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে অছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতি করছে। ছাত্রদের দিয়ে ছাত্র রাজনীতি করাতে হবে। এজন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। প্রতিটি দলের অভ্যন্তরে রাজনীতি ও গণতন্ত্র চর্চার  জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে যায়। এখনো সে পরিবেশ রয়েছে। অতি উৎসাহী রাজনীতিবিদ দেশের তরুণদের ব্যবহার করছেন। ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। তারা শুধু ব্যবহার হয়েই যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, হত্যার রাজনীতি দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।  

আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোকে সহনশীল হতে হবে। সহনশীল রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করতে দলের অভ্যন্তরে তরুণ নেতৃত্বের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

বদরুজ্জামান সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, তরুণদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে আমরা সিলেটের বিএনপির কমিটিতে তরুণদের জায়গা দিয়েছি। অন্যান্য দলও তরুণদের এ সুযোগ দিতে হবে।

এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারলে গণতন্ত্র আসবে। তিনি বলেন, রাজনীতিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তরুণরা রাজনীেিত আরো সক্রিয় হতো। শুধু ভোট দিলেই অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় না। আরো কার্যক্রমে এগিয়ে আসলে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউর, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন ইসলাম কামাল, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. সাইফুল আলম রুহেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর।  

সিলেট মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি সালেহ আহমত খসরু, সহ সভাপতি অধ্যাপিকা সামিয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রব ফয়সল, সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল, সিলেটের মহানগর দপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিম আলো।

এছাড়াও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহানারা বেগম, এ জেড রওশন আরা, হেলেনা বেগম, নার্গিস সুলতানা রুমি ও মহিলা বিএনপি নেত্রী সালেহা কবির শেপি, এড. রোকসানা বেগম শাহনাজ, আমেনরা বেগম রুমি, নিগার সুলতানা ডেইজি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, সিলেটের ডাকের সিনিয়র সাংবাদিক মো. তাজুল ইসলাম, শ্যামল সিলেটের বার্তা সম্পাদক আবুল মোহাম্মদ, যুগভেরীর বার্তা সম্পাদক সজল ছত্রী, সিলেটের মানচিত্রের সিনিয়র রিপোর্টার জামিল আহমেদসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, ডিআই পলিটিক্যাল ফেলো তানিয়া রহমান, জুনায়েদ মিয়া। অনুষ্ঠানের শুরুতে তরুণ নেতৃত্ব বিকাশে সুপারিশ উপস্থাপন করেন ডিআই ফেলো রিনা আক্তার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.