Sylhet Today 24 PRINT

বর্তমান নেতৃত্বের সাথে ছাত্রলীগের ঐতিহ্যের কোনো সম্পর্ক নেই: সুলতান মনসুর

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৪ জানুয়ারী, ২০১৮

বর্তমান ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করছে কিন্তু ছাত্রলীগের ঐতিহ্যকে তারা লালন বা ধারণ করছে না, এমন মন্তব্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদের। বর্তমান নেতৃত্বের সাথে ছাত্রলীগের ঐতিহ্যের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মনে করেন সাবেক এই নেতা।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ ৭০ বছর পূর্ণ করছে।
১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন সুলতান মনসুর। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নিজের সাবেক এই সংগঠনের বর্তমান কর্মকান্ড সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন সিলেটের এই প্রবীন নেতা।

সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম'র আলাপচারিতায় উঠে এসেছে বর্তমান রাজনীতির প্রসঙ্গও।

সুলতান মনসুর বলেন, সত্তর বছর আগে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম। বাংলার গণমানুষের পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য সচেতন অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছেন। এরপর থেকে বাংলাদেশের যত আন্দোলন সংগ্রাম তা ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। সেই ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠনের অতীত ঐতিহ্য থাকলেও বর্তমান ছাত্রলীগের সাথে ওই ঐতিহ্য কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, বর্তমান ছাত্রলীগনামধারী নেতারা ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ও নামকে ব্যবহার করছে কিন্তু ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ধারণ করছে না। কিন্তু আমি মনে করি, এর জন্য বর্তমান ছাত্রলীগের নেতারা দায়ী নয়। যারা এদেরকে পরিচালিত করছে তারা এর জন্য দায়ী। আজকের এই ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ধংস করা ও ছাত্রদের ধংস করার জন্য ওইসব নেতারাই দায়ী। এই যে জেলায় জেলায় হত্যাকাণ্ড, আভ্যন্তরীন বিরোধ থেকে সংঘর্ষ এগুলো আমাদের সময় ছিলো না- এখন ছাত্রলীগকে দিয়ে এসব কারনো হচ্ছে।

সুলতান মনসুর বলেন, এরা (বর্তমান নেতারা) ইতিহাসের কারণে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করছে কিন্তু ছাত্রলীগের ঐতিহ্যকে তারা লালন বা ধারণ করছে না। যে ছাত্রলীগ ৫২, ৫৮, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ এবং ৯০ সালে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলো সেই ছাত্রলীগ আজকে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। এবং তাদেরকে সিট বাণিজ্য, প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়ানো হচ্ছে। ছাত্রলীগের এতিহ্যকে নষ্ট করার জন্য একটি চক্র কাজ করছে। এরা বর্তমান ছাত্রলীগ নামধারী লোকদের দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস, গুলাগুলি, টেন্ডারবাজি, সিট দখল- এগুলা করাচ্ছে।

সাবেক এই ডাকসাইটে ছাত্রনেতা বলেন, গত ২৭ বছর ধরে বাংলাদেশের কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন নাই। অথচ সকল ছাত্রসংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুস্থ ছাত্র রাজনীতি হওয়া উচিত, যেখানে জাতীয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে ছাত্রলীগের মাধ্যমে। কিন্তু সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে যাতে ছাত্র নেতৃত্ব, গণ নেতৃত্ব ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব গড়ে উঠতে না পারে সেজন্যই ছাত্রসংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। ছাত্রলীগকেও সেইভাবে পরিচালিত করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি হতে হলে এখন টাকা দিয়ে পদ কিনতে হয়। কাউন্সিল ছাড়া সম্মেলন হয়। কমিটি হয়। টাকা দিয়ে কমিটি হয়। এসব কারণে নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছে না।

এঅবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্র রাজনীতিকে ছাত্রদের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন- সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তভাবে ছাত্র রাজনীতি করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের মুক্ত চিন্তা, মুক্ত চর্চার সুযোগ করে দেওয়া, ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে ছাত্রসংগঠনকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতিকে ক্রিয়াশীল করে দিয়ে ছাত্রসংগঠনের নির্বাচন করা এবং ছাত্রদের মধ্য থেকে ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত করার মাধ্যমে এ সমস্যার সম্ভব।

 
ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্ধারণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে ছাত্র সেই ছাত্ররাজনীতি করবে। বয়সসীমা নির্ধারণ করে ছাত্ররাজনীতি হবে না।

দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি না থাকার প্রভাব ছাত্ররাজনীতিতেও পড়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দেশে এখন সুস্থ রাজনীতি নেই। সেজন্য সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতিও নেই। এজন্য ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব দায়ী নয়। তাদের যারা পেছন থেকে পরিচালিত করছে তারাই দায়ী।

বর্তমান আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। বর্তমান সরকারী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।  বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের সাথে বর্তমান আওয়ামী লীগের অনেক ফারাক। এখন যেটা আছে সেটা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। এটা সরকারী লীগ। এই সরকার দখলদার সরকার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.