Sylhet Today 24 PRINT

বিএনপির অনুরোধে কী করতে পারে জাতিসংঘ?

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়েছিল ৪৪ বছর আগে। আর এই ৪৪ বছরে জাতিসংঘ একবারই বাংলাদেশের একটি আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সক্রিয় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিল। তবে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সেই উদ্যোগ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। যাকে তিনি দূত হিসেবে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন, সেই অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়।

বাংলাদেশে আবার একটি সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন এক সংকট যখন দানা বাঁধছে, তখন বিরোধী দল বিএনপি চেষ্টা করছে জাতিসংঘের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিউ ইয়র্ক সফর শেষে ঢাকায় ফিরেছেন। সেখানে তিনি জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারি মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার সাথে বৈঠক করেছেন। তবে তাদের মধ্যে ঠিক কী কথা-বার্তা হয়েছে তার কিছুই এখনো জানা যায়নি।

জাতিসংঘের ভূমিকা কী
কোন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসায় জাতিসংঘ আসলে কী ভূমিকা রাখতে পারে? এরকম ভূমিকা পালনের এখতিয়ারই বা তাদের কতটা আছে?

বাংলাদেশের সাবেক একজন কূটনীতিক নাসিম ফেরদৌস মনে করেন, দেশের রাজনীতিতে জাতিসংঘের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই।

"বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। কয়েকবারই সরকার গঠন করেছে। তারা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে জাতিসংঘের সাথে আলাপ আলোচনা করতে পারে। কিন্তু নালিশ করার কোনো সুযোগ নেই অথবা কোনো সাহায্য চাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। সে কারণেই হয়তো তারা সে কথাগুলো উচ্চারণ করেন নাই। কারণ জাতিসংঘের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করার কোনো উপায় নেই, কোনো এখতিয়ারও নেই।"

কোন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কারও অভিযোগের কারণে জাতিসংঘ একতরফাভাবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, রাজনৈতিক বিবাদের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিজে থেকে কোনো চাপ সৃষ্টি করারও সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, কোন দেশে যখন গৃহযুদ্ধ চলে বা সামরিক সংঘাতের মতো পরিস্থিতি হয় - তখন সেখানে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের ভিত্তিতে জাতিসংঘ ব্যবস্থা নিতে পারে।

কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের ক্ষেত্রে একতরফাভাবে এরকম ভূমিকা পালনের সুযোগ নেই।

"রাজনৈতিক কোনো বিরোধ যদি কোনো দেশে থাকে, সেখানে মূল শক্তি যারা, যেমন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, এরা একমত না হলে জাতিসংঘ নিজে বা একতরফাভাবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।"

তারানকোর বিফল মিশন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের তখনকার রাজনীতি বিষয়ক সহকারি মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশে প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। এর আগে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন দুই দলের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি দিয়েছিলেন।

তিনি লিখেছিলেন, রাজনৈতিক বিবাদ মেটাতে জাতিসংঘ কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কিনা, সেজন্য তাঁর দূত দুই দলের সাথে আলোচনা করবেন। সেই প্রেক্ষাপটে তারানকো ২০১২ এবং ২০১৩ সালে দুই বছরে তিন দফায় বাংলাদেশে এসে দুই দলের সাথে বৈঠক করেছিলেন। যদিও দুই দলকে তিনি কোনো সমঝোতার জায়গায় আনতে পারেননি।

সে সময় শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বৈঠকগুলিতে ছিলেন।

তিনি বলছিলেন, তখন তারানকোর মধ্যস্থতার বিষয়টি দুই দলই চেয়েছিল বলে জাতিসংঘের সেই সুযোগ তৈরি হয়েছিল।

"সে সময় তিনটা বৈঠকের মধ্যে দুইটাতে তারানকো নিজে উপস্থিত ছিলেন। দুই দলের মধ্যে কোনো সমঝোতায় আসা যায় কিনা, কিন্তু সেটা হয়নি। সেই দৃষ্টান্ত যদি মাথায় রাখি, দেখা যাবে জাতিসংঘ একটা ভূমিকা রেখেছিল। এবং সেই ভূমিকা কিন্তু উভয় দলই গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিয়েছিল বলে জাতিসংঘ ভূমিকা রাখতে পেরেছিল।"

বিশ্লেষকরা এটাও মনে করছেন যে, বাংলাদেশে পরিস্থিতিরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দাতাদেশ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রভাব এখন অনেক কমে এসেছে। নাসিম ফেরদৌস বলেছেন, যেহেতু দাতাদের উপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমছে, সে কারণে তাদেরও আগের মতো প্রভাব নেই।

"বাংলাদেশের আগে বাজেটের সিংহভাগই দাতাদের কাছ থেকে নিতে হতো। এখন আমাদের আয় থেকেই সিংহভাগ আসে। সুতরাং দাতাদের সেই প্রভাবটা কমে গেছে।"

তিনি আরও বলেছেন, "আমাদের রাজনীতিও অনেক পরিপক্ব হয়েছে এবং মানুষের সচেতনতাও অনেক বেড়েছে। ফলে যে কোনো দেশ এসে চাপ দেবে, আর বাংলাদেশের মানুষ তা গ্রহণ করে নেবে, বাংলাদেশে বোধহয় সেই জায়গায় আর নেই।" সূত্র: বিবিসি বাংলা; কাদির কল্লোল ঢাকা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.