Sylhet Today 24 PRINT

‘গদি বদলের’ সাথে সাথে ‘ব্যবস্থা বদলের’ লড়াইও জোরদার করতে হবে: সেলিম

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

“গণতন্ত্রহীনতা ও লুটপাট রুখো, গদি-নীতি-ব্যবস্থা বদলাও; স্বদেশ বাঁচাও” স্লোগানকে সামনে রেখে দেশরক্ষা অভিযাত্রা উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সিলেট বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি সংগ্রামী জননেতা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ভাত ও ভোটের নিশ্চয়তার জন্য ‘গদি বদলের’ সাথে সাথে ‘ব্যবস্থা বদলের’ লড়াইকেও জোরদার করতে হবে

দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩ টায় সিপিবি সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, আব্দুল্লাহ কাফি রতন, কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সম্পাদক জলি তালুকদার।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষার আন্দোলনে অবতীর্ণ হচ্ছি। তাই কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে এসেছি। আমরা একদিন পাকিস্তান সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষা করতে সংগ্রামে নেমেছিলাম, আপনারাও নেমেছিলেন জান বাজি রেখে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সবাই মিলে দেশকে মুক্ত করেছি। কিন্তু আজকের দেশ কি ১৭ কোটি মানুষের জন্য মুক্ত? না, সবার জন্য মুক্ত হয়নি। দেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে এক শতাংশ লুটেরা ধনিকগোষ্ঠী, অন্যদিকে ৯৯ শতাংশ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষ। আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে- ৯৯ ভাগ মানুষকে দেশের ৯৯ শতাংশ সম্পদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। কিছু সংখ্যক লোক ৯৯ ভাগ মানুষের সম্পদ লুটেপুটে খাবে, সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে, এটা মেনে নেব না। সাধারণ মানুষ শোষিত হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশের আইন-কানুন, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই গরিবদের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন করি, গরিব-মেহনতি মানুষরা কি সব সময় অধিকার বঞ্চিতই থাকবে?”

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা এখন একত্রিত হয়েছে লুটপাটে। বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনছে। সরকারি দলের লোকজন সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে জুয়া খেলছে। এদের রুখতে হলে বাম কমিউনিস্টদের একত্রিত হতে হবে। সবাইকে এক কাতারে আসতে হবে। একইসঙ্গে গ্রামে- গ্রামে, সারা দেশে স্থানীয় ও জাতীয় দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, ৫০ বছর যাবত আওয়ামী লীগ-বিএনপির অপশাসনের সাথে সাথে দেশের মানুষ সামরিক শাসনও দেখেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’টোই বুর্জোয়া লুটেরা দল। এদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন নিরাপদ নয়। এদের দ্বারা গরিব-মেহনতি মানুষের মুক্তি আসবে না।

তিনি বলেন, শোষণ ও বৈষম্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েও কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে কামলা, কিষাণ, মুটে, মজুর, মেহনতি মানুষ ও মধ্যবিত্ত জনগণ। নানা সমস্যার মধ্যেও গ্রামের কৃষক-খেতমজুর কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। এর ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ তাদের বঞ্চনার শেষ নেই। কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে। খেতমজুরদের সারা বছরের কাজের কোনো সংস্থান নেই। সরকারি আমলা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও শ্রমিকের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়নি। শ্রমিকরা গার্মেন্টে কাজ করে দেশের আয় বাড়াচ্ছে। অথচ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মতো মজুরি পাচ্ছে না তারা। শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরের সন্তানেরা দেশে কাজ না পেয়ে বিদেশে গিয়ে অমানবিক কাজে বাধ্য হচ্ছে। তাদের পাঠানো টাকায় সরকার উন্নয়নের গল্প ফেঁদে বাহবা নিচ্ছে।

কমরেড সেলিম আরও বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে অবাধে টাকা লোপাট হচ্ছে। লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে জমা রাখছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে। বিদেশে সম্পদ পাচার বন্ধ করার জন্য একাত্তর সালে অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিসংগ্রাম করা যদি ন্যায়সঙ্গত হয়ে থাকে, বাংলার সম্পদ বাংলায় রাখার জন্য একইভাবে মুক্তিসংগ্রামের নতুন অধ্যায় রচনা করা সমস্ত জনগণের কাছে একটা আশু কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য শুধু গদির বদল হলেই চলবে না; গদি বদলের সাথে সাথে ব্যবস্থা বদলের লড়াইকেও জোরদার করতে হবে। বুর্জোয়া দ্বি-দলীয় মেরুকরণের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ধারায় দেশকে পরিচালিত করতে বাম বিকল্প গড়ে তুলে শোষক শ্রেণির বিপরীতে শোষিত শ্রেণির শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে একটি সুখি সমৃদ্ধশালী বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে একযোগে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া মুক্তির আর কোনো বিকল্প নেই।

সিলেট নগরীর কিন ব্রিজ পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন সুমন। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিবি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন, হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম খোকা, সিপিবি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল। সঞ্চালনা করেন সিপিবি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড নিলিমেশ ঘোষ বলু ও ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.